দিল্লি: শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ১০ জন মুখ্যমন্ত্রী গরহাজির রইলেন। প্রথম বয়কট করেছিলেন মমতা। এর পর একে একে সেই পথে হাঁটলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ভগবন্ত মান-সহ অবিজেপি শাসিত রাজ্যের ১০ জন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী মোদির বন্ধু এবং গত ৯ বছর ধরেই বিজেপির ‘পরম মিত্র’ হিসেবে পরিচিত ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক পর্যন্ত আসেননি।
দিল্লির প্রগতি ময়দানে নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ‘বয়কট’ করলেন দেশের সিংহভাগ বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। মমতা-নবীনের পাশাপাশি এদিনের বৈঠক এড়িয়েছেন নীতীশ কুমার (বিহার), অরবিন্দ কেজরিওয়াল (দিল্লি), পিনারাই বিজয়ন (কেরল), এম কে স্ট্যালিন (তামিলনাড়ু), অশোক গহলৌত (রাজস্থান), ভগবন্ত সিং মান (পাঞ্জাব), কে চন্দ্রশেখর রাও (তেলেঙ্গানা), সিদ্ধারামাইয়া (কর্ণাটক)।
এঁদের মধ্যে মমতা, নীতীশ, কেজরীওয়ালরা সরাসরি কেন্দ্রের নীতির বিরোধিতায় বৈঠক বয়কটের কথা জানিয়েছেন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত অসুস্থতার কারণে বৈঠকে আসতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও চিঠি লিখে কেন্দ্রকে জানিয়েছেন, মোদি সরকার পঞ্জাবের স্বার্থ না দেখার প্রতিবাদে বৈঠক বয়কট করছেন তিনি। অন্যদিকে এম কে স্ট্যালিন বিদেশ সফরে ব্যস্ত থাকায় বৈঠক এড়িয়েছেন। তবে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বৈঠকে গরহাজির থাকার কারণ জানাননি।
সরকার থেকে সংসদ, সর্বত্র মোদিকে বয়কটের এই সূক্ষ্ম স্ট্র্যাটেজি আসলে বিরোধীদের স্পষ্ট বার্তা, দেশশাসনে মোদি এখন একঘরে। সব সিদ্ধান্ত সর্বদা একাই নিতে পছন্দ করেন তিনি। আর তাই তাঁর কোনও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বিরোধীরা অংশ নেবে না।
এহেন বয়কটের সিদ্ধান্তে চাপে পড়ে পাল্টা তীব্র আক্রমণের রাস্তা নিয়েছে মোদি সরকার ও বিজেপি। কেন্দ্র কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছে, ‘বিকশিত ভারত’ শীর্ষক এই বৈঠকের লক্ষ্যই হল উন্নয়নের কাঠামো নির্মাণ। আগামী ২৫ বছর দেশ কোনদিকে অগ্রসর হবে, সেই রূপরেখা নির্মাণ করা। সেই বৈঠক যারা এভাবে বয়কট করছে, তারা উন্নয়নের ভাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের রাজ্যকেই বঞ্চিত করবে।
প্রসঙ্গত, সার্বিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে নীতি আয়োগ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে এই বৈঠক হয়। ২০৪৭-কে সামনে রেখে এ বারের বৈঠকে স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০৪৭-এর মধ্যে ভারতকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে একাধিক লক্ষ্যমাত্রাও রাখা হয়েছে। বিরোধীদের বয়কট প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “কেন্দ্র-রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে সমন্বয় রেখে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনার উদ্দেশে নীতি আয়োগের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গায় বিরোধীদের এতে অংশ না নেওয়ার ঘটনা এককথায় দুর্ভাগ্যজনক”।