দেহরাদুন: সমস্ত উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, প্রতীক্ষার অবসান হল। ১৭ দিন ধরে উত্তরকাশীর কাছে সুড়ঙ্গে আটকে থাকার পর মঙ্গলবার রাতে একে একে উদ্ধার করা হল ৪১ জন শ্রমিককে। উদ্ধারের পরে তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে গ্রিন করিডর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৩০ কিমি দূরের চিনিয়ালিসৌরের অস্থায়ী হাসপাতালে। আটকে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে তিন জন পশ্চিমবঙ্গের।
তুরপুনের মতো বিদেশি খননযন্ত্রটি শুক্রবার ধাতব বাধায় ভেঙে যাওয়ার পর আটক শ্রমিকদের উদ্ধার করতে খোঁড়া হয় ‘ইঁদুরের গর্ত’ (যার পোশাকি নাম ‘র্যাট-হোল মাইনিং’)। সেই গর্তের মধ্য দিয়ে পাঠানো পাইপ দিয়ে আটক শ্রমিকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এনডিআরএফ-র (জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী) জওয়ানেরা।
সেই সময়ে সিলকিয়ারায় সুড়ঙ্গের ঠিক বাইরে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ভিকে সিংহ। ৭টা ৫২ মিনিট নাগাদ সুড়ঙ্গ থেকে আটক শ্রমিকদের প্রথমজন বেরিয়ে আসেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সুড়ঙ্গের ভিতরে যাঁরা আটকে আছেন তাঁরা সকলেই সুস্থ আছেন। তার পরে একে একে বাকিদের সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনা হয়। রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে শেষ হয় ‘অপারেশন জিন্দেগি’।
আটকে থাকা শ্রমিকদের বেশির ভাগ পূর্ব ভারতের
আটকে থাকা শ্রমিকদের যে তালিকা প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে পূর্ব ভারতের বাসিন্দারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এঁদের বেশির ভাগই তফশিলি জনগোষ্ঠীর। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ছিল ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসম থেকে যাওয়া শ্রমিকরাও সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন।
এ ছাড়াও উত্তর ভারতের উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশের শ্রমিকরাও আটকে ছিলেন সুড়ঙ্গে। উত্তরাখণ্ড থেকে ছিলেন মাত্র দু’জন – গব্বর সিংহ নেগি এবং পুষ্কর। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তালিকায় রয়েছেন তিন জন – কোচবিহারের মানিক তালুকদার এবং হুগলি জেলার সেবিক পাখিরা ও জয়দেব প্রামাণিক।
সফল উদ্ধার অভিযানের পর কী বললেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার রাতে সফল উদ্ধারের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘‘উত্তরকাশীতে আমাদের ভাইদের উদ্ধার অভিযানের সাফল্য সবাইকে আবেগাপ্লুত করছে। যাঁরা সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন সেই সব বন্ধুদের আমি বলতে চাই, আপনাদের সাহস আর ধৈর্য প্রত্যেককে অনুপ্রাণিত করবে। আমি আপনাদের সকলের কুশলতা ও সুস্থ স্বাস্থ্য কামনা করি।”
প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, “এটা খুবই সন্তুষ্টির বিষয় যে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমাদের এই বন্ধুরা এখন তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই প্রতিকূল সময়ে এই সমস্ত পরিবার যে ধৈর্য ও সাহস দেখিয়েছে তার কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”
পাশাপাশি উদ্ধারকাজে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদী। তিনি লিখেছেন, ‘‘এই উদ্ধার অভিযানে জড়িত সকলকে আমি সেলাম জানাই। তাঁদের বাহাদুরি আর সংকল্প-শক্তি আমাদের শ্রমিক ভাইদের নতুন জীবন দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন
২৩ বার ব্যর্থ, অবশেষে তিনি পারলেন, প্রমাণ করলেন চেষ্টা করলে সবই হয়