Home খবর দেশ প্রদীপ সাংওয়ানের চন্দ্রতাল সাফাই অভিযান, ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় উদ্ধার ১৫৯ কেজি মদের...

প্রদীপ সাংওয়ানের চন্দ্রতাল সাফাই অভিযান, ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় উদ্ধার ১৫৯ কেজি মদের বোতল

চন্দ্রতাল হ্রদের সৌন্দর্য নষ্ট করছে মদের বোতল ও প্লাস্টিক বর্জ্য। ১৪,১০০ ফুট উচ্চতায় হিলিং হিমালয়াস দলের অভিযান, উদ্ধার ১৫৯ কেজি বর্জ্য। প্রদীপ সাংওয়ান বললেন, এটি শুধু নোংরামি নয়, এক গভীর সংকট।

Chandratal Cleanup
চন্দ্রতালের সৌন্দর্যে দূষণের থাবা! ১৪,১০০ ফুট উচ্চতায় ১৫৯ কেজি মদের বোতল

হিমাচলের স্পিতি উপত্যকার চন্দ্রতাল হ্রদ ভ্রমণের স্বপ্ন অনেক পর্যটকরা দেখেন। কিন্তু আজ সেই চাঁদের মতো নীল হ্রদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিক, কাচের বোতল আর বর্জ্যের স্তূপ।

হিমাচল প্রদেশের এই হ্রদের পরিবেশ রক্ষায় নেমেছে পরিবেশকর্মী প্রদীপ সাংওয়ানের নেতৃত্বাধীন সংস্থা ‘হিলিং হিমালয়াস’। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাংওয়ান জানিয়েছেন, “এটা শুধু অসচেতনতার সমস্যা নয়, এটা এক গভীর সংকট।”

গত শুক্রবার নিজের এক্স (X) অ্যাকাউন্টে চন্দ্রতাল হ্রদে এক পরিচ্ছন্নতা অভিযানের বিবরণ শেয়ার করেন তিনি।

তিনি লেখেন—

চন্দ্রতাল সাফাই অভিযান
মোট বর্জ্য: ১৫৯.৫ কেজি
ব্যাগের সংখ্যা: ৩৮
অংশগ্রহণকারী: ১০ জন
সবচেয়ে বেশি উদ্ধার হয়েছে কাচের বোতল।”

সংগৃহীত বোতলগুলির মধ্যে ছিল Tuborg, Budweiser, Kingfisher, BroCode, Old Monk, Black Dog, Blender’s Pride-র মতো নামী ব্র্যান্ডের মদের বোতল। শুধু ভাঙা সাদা কাচের ওজনই ২.৩ কেজি।

তাঁর এই পোস্টের পর এসেছে প্রতিক্রিয়াও। এক্স ব্যবহারকারী এবং অভিযাত্রীদের প্রশ্ন— “এত উচ্চতায় মানুষ কীভাবে এত মদ্যপান করে?” অন্য একজন মন্তব্য করেন, “চন্দ্রতাল পরিষ্কার রাখার জন্য আপনাদের অভিনন্দন। এটি প্রকৃত ভালোবাসার প্রকাশ।”

প্রদীপ সাংওয়ান জানান, সংগৃহীত বর্জ্য তাঁদের কোকসার প্রসেসিং কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে তা দ্বিতীয় স্তরের বাছাই ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাঠানো হবে। প্রায় ৭-৮ টন কাচের বোতল জমলে তা যমুনানগরে পাঠানো হবে পুনর্ব্যবহারের জন্য।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো হয় যদি পর্যটকেরা নিজেদের বর্জ্য নিজেরাই নিচে নিয়ে যান।”

কে প্রদীপ সাংওয়ান

হরিয়ানার বাসিন্দা সাংওয়ান ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এরপর তিনি পাহাড়ের পথে বেরিয়ে পড়েন, ২০১৪ সালে একবার এক রাখাল সম্প্রদায়ের সঙ্গে থাকার সময় তাঁদের সুস্থায়ী জীবনযাপন দেখে অনুপ্রাণিত হন।

২০১৬ সালে নিজে ঋণ নিয়ে শুরু করেন ‘হিলিং হিমালয়াস’। আজ প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা জুড়ে পরিষ্কার অভিযান চালিয়ে তাঁরা সরিয়েছেন ৭০০ টনেরও বেশি বর্জ্য

তাঁর কাজ দু’বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’-এ স্বীকৃতি পেয়েছে— প্রথমবার ২০২০ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০২৫ সালের শততম পর্বে।

 বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা

হিলিং হিমালয়াস বর্তমানে পাঁচটি জায়গায় Material Recycling Facility (MRF) চালাচ্ছে— নারকান্ডা (শিমলা), তাবো (স্পিতি), পুহ ও রাক্ষম (কিন্নৌর), এবং মানসারল (মানালি)
এই কেন্দ্রগুলি প্রতিদিন ৪.৫ টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে এবং স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করে।

 পর্যটনের চাপ ও আশঙ্কা

২০১৯ সালে হিমাচল প্রদেশে প্রায় ১.৭ কোটি পর্যটক এসেছিলেন, যা রাজ্যের জনসংখ্যার তিনগুণ। এর ফলেই চন্দ্রতালের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে বর্জ্য সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

প্রদীপ সাংওয়ান বলেন, “পর্যটকেরা আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে, কিন্তু নিজেরাই রেখে যান তার ক্ষতচিহ্ন। সত্যিকারের দায়িত্ববোধ দেখাতে হলে নিজের বর্জ্য নিজেই বহন করতে হবে।”

আরও পড়ুন: লাদাখে অশান্তির জের, জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version