বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে স্বামী ও পুত্র-সহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সোনালিদের বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেঠিক। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখার আবেদন জানানো হলেও আদালত সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে।
ঘটনা শুরু বীরভূমের পাইকরের সোনালি বিবিকে কেন্দ্র করে। কাজের সূত্রে সোনালি দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে বসবাস করছিলেন। স্বামী দানিশ শেখ এবং আট বছরের পুত্রকে নিয়ে দিল্লির রোহিণীর ২৬ সেক্টরে থাকতেন তিনি। প্রায় দুই দশক ধরে সেখানে কাগজকুড়ুনি ও পরিচারিকার কাজ করতেন সোনালি।
পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুন বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করে দিল্লির কে এন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ। পরে কোনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই সোনালি, তাঁর স্বামী ও সন্তানসহ পাঁচজনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় তাঁদের গ্রেফতারও করে স্থানীয় পুলিশ।
সোনালির পরিবার হাই কোর্টে দাবি জানায়, তাঁরা ভারতের নাগরিক। বীরভূমের বাসিন্দা হিসেবে জমির দলিল, ভোটার কার্ড, এমনকি সোনালির আট বছরের সন্তানের জন্ম শংসাপত্রও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
সোনালির আইনজীবীর বক্তব্য, দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যথাযথ যাচাই না করেই নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাঁদের বিদেশে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টও উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিয়েছিল।
কলকাতা হাই কোর্টের এই রায়ে আপাতত স্বস্তিতে সোনালির পরিবার। সোনালি বর্তমানে ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা, ফলে পরিবারের উদ্বেগ আরও বেড়েছিল— বিদেশে সন্তান জন্মালে তার নাগরিকত্বের প্রশ্নে জটিলতা তৈরি হতো।
সোনালির বাবা বলেন, “কলকাতা হাই কোর্টকে ধন্যবাদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সামিরুল ইসলাম পাশে না থাকলে মেয়েকে ফেরাতে পারতাম না। দিল্লি পুলিশ না জেনে বাংলাদেশ পাঠিয়েছে। আমরা তো বীরভূমের মানুষ।”
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, “সোনালিকে বাংলাদেশে পাঠানোর খবর জানার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সক্রিয় হই। আদালতের রায় সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। সোনালিদের দেশে ফেরানোর পর যেভাবে সাহায্য লাগবে, সব রকম সহযোগিতা করব।”
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “অমিত শাহ কলকাতায় আছেন। এক মাকে অপবাদ দিয়ে, শুধুমাত্র বাংলা বলার জন্য বিদেশি বলে পাঠিয়ে দিচ্ছে আপনার সরকার, এজেন্সি। প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চান অমিত শাহ। বিজেপি ক্ষমা চাক।”
আরও পড়ুন: লাদাখে অশান্তির জের, জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক