Homeখবরদেশরাতের কলকাতা তখন ঘুমোচ্ছে, যে ভাবে ঘর ছাড়লেন সুভাষ

রাতের কলকাতা তখন ঘুমোচ্ছে, যে ভাবে ঘর ছাড়লেন সুভাষ

প্রকাশিত

শম্ভু সেন

রাত বাড়ছে। চুপিসারে একটা গাড়ি বেরিয়ে গেল এলগিন রোডের বাড়ি থেকে। বাঁ দিক, ডান দিক করে মূল সড়কে পড়ে ছুটে চলল ঝড়ের বেগে। রাতের কলকাতা তখন ঘুমোচ্ছে বটে, কিন্তু পিছনে তো শত্রুর সজাগ চোখ।

গাড়ি এসে পড়ে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে। শেরশাহের তৈরি রাজপথ, ছুটে গেছে দিল্লি হয়ে আরও পশ্চিমে। সেই পথেই ছুটছে গাড়ি। স্টিয়ারিং-এ বসে শিশির বোস, শরৎ বোসের ছেলে। ২১ বছরের শিশির মেডিক্যালের ছাত্র। পাশে বসে রাঙা কাকাবাবু থুড়ি মৌলবীসাহেব। সুদীর্ঘ ৪৪ বছরের জীবন পড়ে রইল পিছনে। এখন সামনে নতুন পথ, নতুন যাত্রা।

অ্যাক্সিলারেটরের ওপর পা চেপে বসে শিশিরের। সক্কাল সক্কাল পৌঁছোতে হবে গন্তব্যে। পাশে বসা মানুষটি নির্বিকার। কী ভাবছেন তিনি? ভবিষ্যতের সংগ্রামের ছক কষছেন?

এসে গেল গোবিন্দপুর। গাড়ির গতি একটু কমে। গোবিন্দপুরকে পাশে রেখে গাড়ি চলে ধানবাদের পথে। বাঁয়ে পড়ে বারারি। এখানেই তো অশোকের বাংলো। শরৎ বোসের বড়ো ছেলে ড. অশোক বোস, ধানবাদের বড়ো অফিসার।

মৌলবীসাহেব নেমে পড়েন গাড়ি থেকে, হাতে শুধু অ্যাটাচি। বিছানা আর স্যুটকেস গাড়িতেই থাকে। মৌলবীসাহেব হেঁটেই এগিয়ে চলেন। সব পরিকল্পনা অশোককে আগে থেকেই বলা ছিল। আর এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কেউ যেন এর বিন্দুবিসর্গ না জানতে পারে।
সকালবেলা। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৪১। বেশ ঠান্ডা। অশোকের দরজায় এসে পৌঁছোল শিশিরের গাড়ি। তার মিনিট পনেরো পরে এসে পৌঁছোন মৌলবীসাহেব, ইনস্যুরেন্সের এজেন্ট। নিখুঁত পরিপাটি দেহের সজ্জা। পরণে শেরওয়ানি আর ফেজ, ছাঁটা গোঁফ, ছুঁচলো দাড়ি।

করমর্দন করে অশোক মৌলবীসাহেবকে ডেকে নিয়ে যান ঘরে। বাড়ির কর্ত্রী, পরিচারকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। থাকার ব্যবস্থা হয় বাইরের ঘরে।

অশোকের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা হয় মৌলবীসাহেবের। দু’-চারটি কথা বলে গৃহস্বামী চলে যান কর্মস্থলে। টিফিনের ছুটিতে ঘরে আসেন অশোক। ফের দু’ জনায় অল্পবিস্তর কথা হয়। দুপুরের খাবার আসে মৌলবীর ঘরে। অজানা অতিথি, তায় ভিন্ন ধর্মীয়, এক সঙ্গে খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আরও যেন কিছু কথা বাকি থাকে ইনস্যুরেন্সের এজেন্টের। আরও কিছু বোঝাতে চান বোসসাহেবকে। বোসসাহেব ব্যস্ত মানুষ। বলেন, সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে আবার কথা হবে।

“কিন্তু, আমাকে তো সন্ধ্যার ট্রেন ধরতেই হবে”, বলেন মৌলবীসাহেব। “ঠিক আছে”, বলে বেরিয়ে যান অশোক। (আসলে এখানে মৌলবীসাহেবের থাকার মেয়াদ যে সন্ধ্যা পর্যন্ত তা তো মৌলবীসাহেব যেমন জানেন, তেমনই জানেন বোসসাহেব।)

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। অফিস থেকে ফিরে এসেছেন বোসসাহেব। খাবার দেওয়া হয় মৌলবীসাহেবকে। খুব সামান্য খেয়ে উঠে পড়েন মৌলবীসাহেব। বোসসাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়েন মৌলবীসাহেব। গৃহস্বামী পরিচারককে ট্যাক্সি ডেকে দিতে বলেন। মৌলবীসাহেব জানিয়ে দেন, তার দরকার হবে না। পথেই ট্যাক্সি ডেকে নেবেন।

একটু পরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শিশির, সঙ্গে অশোক আর তাঁর স্ত্রী। পরিচারকদের বলে গেলেন, তাঁরা সান্ধ্যভ্রমণে বেরোচ্ছেন।
এগিয়ে যায় গাড়ি। আগে থেকে বলে দেওয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন মৌলবীসাহেব। গাড়ি থামে। দ্রুত উঠে পড়েন মৌলবীসাহেব। বিস্ময়ে বোবা হয়ে যান অশোকের স্ত্রী। এ যে রাঙা কাকাবাবু।

গাড়ি ছুটে চলে গোমো স্টেশনের দিকে। দিল্লি-কালকা মেল ধরতে হবে মৌলবীসাহেবকে। স্টেশনের একটু আগে গাড়ি থামে। নেমে পড়েন মৌলবীসাহেব। তিন জনের উদ্দেশে বলেন, “আমি চলি, তোমরা ফিরে যাও।”

শিশিরের হাতে একটা গান্ধী-টুপি দিয়ে বলেন, “ফেরবার পথে টুপিটা পরে নিও।”

হন্তদন্ত হয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলেন মৌলবীসাহেব তথা রাঙা কাকাবাবু তথা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

তিন জনে নিঃস্পন্দ, নিশ্চল হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখ থেকে অবিরত ধারায় জল গড়িয়ে পড়ে। ট্রেন আসে। ট্রেন ছেড়ে দেয়। ওঁরা ভাবতে থাকেন, এই মহাজীবন নির্বিঘ্নে তাঁর ঈপ্সিত পথে যেতে পারবেন তো?

(ঋণ স্বীকার: নেতাজী সঙ্গ ও প্রসঙ্গ, তৃতীয় খণ্ড, নরেন্দ্রনারায়ণ চক্রবর্তী। নরেন্দ্রনারায়ণ চক্রবর্তী ছিলেন নেতাজির অত্যন্ত কাছের মানুষ। ১৯২১-এ প্রথম আলাপ। কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী। ক্রমান্বয়ে নেতাজির অনুগামী। নেতাজির কলকাতা-বাসের শেষ দিনটি পর্যন্ত তাঁর পাশে ছিলেন।)

সাম্প্রতিকতম

প্রয়াত প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর, ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বালুরঘাটে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিযুক্ত নয়া মডেলের স্মার্টফোন আনল রিয়েলমি

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নয়া মডেলের স্মার্টফোন কেনার পরিকল্পনা করছেন? আপনি কিনতেই পারেন রিয়েলমি সংস্থার নয়া...

আটকে একাধিক বিল, রাজভবনকে নোটিস পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট

কলকাতা: রাজ্যের একাধিক বিল রাজভবনে আটকে আছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সই করছেন না,...

‘পূর্ণ শক্তি দিয়ে সন্ত্রাস দমন’, কার্গিল দিবসে পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

নয়াদিল্লি: সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবার কার্গিল বিজয় দিবসের...

আরও পড়ুন

‘পূর্ণ শক্তি দিয়ে সন্ত্রাস দমন’, কার্গিল দিবসে পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

নয়াদিল্লি: সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবার কার্গিল বিজয় দিবসের...

নিট-এ শীর্ষ স্থানাধিকারীর সংখ্যা এক ধাক্কায় ৬১ থেকে নেমে আসবে ১৭-য়, সংশোধিত মেধা তালিকা সম্ভবত আজই

নয়াদিল্লি: স্নাতক স্তরের ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট (NEET-UG)-এর সংশোধিত মেধা তালিকা ঘোষণা করা হতে...

ডিজিটাল অ্যারেস্ট! প্রতারণার নয়া ফাঁদে ৫৯ লক্ষ টাকা খোয়ালেন চিকিৎসক

প্রতারণার নয়া ফাঁদে পড়ে ৫৯ লক্ষ খোয়ালেন নয়ডার এক মহিলা চিকিৎসক। প্রতারকরা তাঁকে বলেছিল,...
ইন্টারভিউয়ে কীরকম শরীরী ভঙ্গিমা থাকা উচিত বাড়তি মেদ ঝরানোর নয়া ট্রেন্ড ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ কী?