মোরবীর সেতু বিপর্যয়ের তিন বছর কাটতে না কাটতেই গুজরাত ফের কাঁপল সেতু দুর্ঘটনায়। বুধবার সকালে বডোদরার কাছে মহিসাগর নদীর উপর থাকা গম্ভীরা সেতুর একটি অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে, আহত আরও অনেক। ঘটনাস্থলে রীতিমতো উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
চোখের সামনে সেতু থেকে পড়ল গাড়ি
দুর্ঘটনার সময়কার যে ভিডিয়ো ও ছবি সামনে এসেছে, তা এককথায় হৃদয়বিদারক। মুহূর্তে সেতুর একটি বড় অংশ নদীতে পড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। তার উপর থাকা একের পর এক গাড়ি পড়ে যায় জলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, “হঠাৎ বিকট আওয়াজ, চোখের সামনেই নদীতে পড়ল ৪টি গাড়ি—দুটি লরি, একটি বোলেরো ও একটি পিকআপ ভ্যান।”
একটি তেলের ট্যাঙ্কার সেতুর প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল, ফলে অল্পের জন্য রক্ষা পায়।
স্থানীয়দের ক্ষোভ: “সেতুর হাল ভয়ানক ছিল, বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি”
স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, ৪০ বছরের পুরনো এই সেতু বহু দিন ধরেই বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। নিত্যদিন ভারী যান চলাচলের কারণে এর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল।
একজন বাসিন্দা বলেন, “প্রতিদিনই সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পেতাম। যানজট লেগেই থাকত। রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বহু বার জানানো হলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। এখন এই সেতু ‘সুইসাইড পয়েন্ট’ হয়ে উঠেছিল।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, তদন্তে নামল প্রশাসন
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল জানান, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বডোদরার কালেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও ডুবুরি। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত প্রশাসন দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ স্পষ্ট করেনি। পুলিশ ঘিরে রেখেছে এলাকা, শুরু হয়েছে তদন্ত। সেতু বিপর্যয়ের দায় নিয়ে মুখ খোলেননি জেলা বা সেতু নির্মাণ বিভাগের কেউ।
গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হৃষীকেশ প্যাটেল দাবি করেছেন, সেতুটি ১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছিল এবং নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর শোকপ্রকাশ ও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা
গুজরাতের এই দুর্ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে। আহতরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে।
মধ্য গুজরাত ও সৌরাষ্ট্রের সংযোগ ছিল গম্ভীরা সেতু
এই সেতু ছিল আনন্দ, ভরুচ, অঙ্কলেশ্বর, বডোদরা সহ বহু এলাকার মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। ভারী ও হালকা যানবাহনে প্রতিদিন চাপ পড়ত এই সেতুতে। সেই কারণেই এর রক্ষণাবেক্ষণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঘটনাটি শুধু একটি সেতু ভেঙে পড়া নয়—এ এক পরিকাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি, যে ব্যর্থতার শিকার হল সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বারবার সতর্ক করলেও প্রশাসনের কানে পৌঁছয় না মানুষের আশঙ্কার কথা। তদন্তে কী উঠে আসে, সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন: ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ল রাজস্থানে, একের পর এক দুর্ঘটনায় উঠছে প্রশ্ন