Home খবর দেশ উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামে হড়পা বান! মেঘভাঙা বৃষ্টি নয়, হিমবাহ ধস বা হিমস্রোতই...

উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামে হড়পা বান! মেঘভাঙা বৃষ্টি নয়, হিমবাহ ধস বা হিমস্রোতই কারণ হতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামে ভয়াবহ হড়পা বানের পিছনে মেঘভাঙা বৃষ্টি নয়, কারণ হতে পারে হিমবাহ ধস বা গ্লেশিয়াল লেক ফাটল— জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট চিত্রে মিলল প্রমাণ।

landslide near Dharali village

উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামে মঙ্গলবার যে ভয়াবহ হড়পা বান নেমে এল, তার কারণ মেঘভাঙা বৃষ্টি নয়— বরং উজানের দিকে হিমবাহ ধস (বরফধস) বা হিমস্রোতের কারণে তৈরি হওয়া আকস্মিক বন্যা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের উপগ্রহ চিত্র এবং আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে এই মত প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত কম।

আবহাওয়া দফতরের আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের প্রবীণ বৈজ্ঞানিক রোহিত থাপলিয়াল বলেন, “ধরালি ও আশপাশের এলাকায় ওই দিন মাত্র ৬.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এমনকি ২৪ ঘণ্টায় হরসিল ও ভাটওয়ারিতে যথাক্রমে মাত্র ৯ ও ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে— যা মেঘভাঙা বৃষ্টির ক্ষেত্রে মোটেই স্বাভাবিক নয়।”

আর এক প্রবীণ বিজ্ঞানী বলেন, “এই পরিমাণ বৃষ্টিতে এমন ভয়াবহ বন্যা ঘটতে পারে না। বরং এতে বোঝা যাচ্ছে, উজানে বড় ধরনের হিমবাহ ধস বা হিমহ্রদের ফাটলের মতো ঘটনা ঘটেছে।”

সংবাদমাধ্যমের হাতে থাকা উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ধরালি গ্রামের উপরে খীরগাড় নালার উৎসস্থলে একাধিক বড় হিমবাহ ও অন্তত দু’টি হিমহ্রদ রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই হিমহ্রদগুলির মধ্যে কোনও একটি হঠাৎ ফেটে গিয়ে বা হিমবাহ ভেঙে বিশাল জলরাশি ধেয়ে এসেই এই হড়পা বান তৈরি হয়ে থাকতে পারে।

বিষয়টি ২০২১ সালের চামোলি জেলার রাইনি দুর্যোগের সঙ্গেও তুলনা টানা হয়েছে, যেখানে এক বিশাল পাথর-বরফ ধসের কারণে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনায় ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং তপোবন-বিষ্ণুগড় বিদ্যুৎ প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণ হারান ২০০-র বেশি মানুষ।

ওয়াডিয়া হিমালয় ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাখণ্ডে বর্তমানে প্রায় ১,২৬৬টি হিমহ্রদ রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি হ্রদকে জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এনডিএমএ) উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ৫টি হ্রদকে ‘চরম বিপজ্জনক’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

উত্তরাখণ্ড বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী অধিকর্তা ও ভূবিজ্ঞানী পিয়ূষ রাউতেলা বলেন, “পাহাড়ি অঞ্চলে উপরের দিকে জল জমে এবং সেটি হঠাৎ নিচে নেমে এলেই এমন দুর্যোগ হয়। শুধু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে না।”

এই মুহূর্তে উদ্ধার ও ত্রাণকার্য চলছে। তবে এই ঘটনায় হিমালয় অঞ্চলের ভঙ্গুর প্রকৃতি এবং হিমহ্রদগুলির উপর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে চলে এল।

আরও পড়ুন: উত্তরকাশীর ধরালিতে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে হড়পা বান, মৃত ৪, নিখোঁজ অন্তত ৫০

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version