মৌ বসু
বিনিয়োগের নামে দেশে ক্রমশ বাড়ছে আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা। ফেসবুক, এক্স হ্যান্ডেল, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশাল মিডিয়া মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ঘটছে এ সব আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা। স্বল্প বিনিয়োগে বিশাল রিটার্নের লোভ বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনলাইনে বিনিয়োগের টোপ দেখিয়ে এ সব আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। সাইবার সিক্যুরিটি বিশেষজ্ঞদের করা সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সাইবার থ্রেট ইনটেলিজেন্স ফার্ম ‘ক্লাউডসেক’ (CloudSEK) এ বছরের গোড়া থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে নানা রকমের সন্দেহজনক বিনিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়েছে। ফেসবুকে এ রকম ২৯ হাজারের বেশি সন্দেহজনক বিনিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো বিনিয়োগের বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ৮১ হাজার। এক্স হ্যান্ডেলে ৮১ হাজার ভুয়ো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম করে আর্থিক বিনিয়োগের টোপ দিচ্ছে সাইবার জালিয়াতরা।
কীভাবে ভুয়ো আর্থিক টোপ দিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা
গবেষকদের মতে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লুকিয়েচুরিয়ে বসে থাকে সাইবার জালিয়াতরা। মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নজর রাখে তারা। সম্ভাব্য শিকারের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে বিভিন্ন রকমের সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি মেসেজ পাঠায়। এর পর সম্ভাব্য শিকারের মন জয় করতে ও নিজেদের মতো করে চালিত করতে বিভিন্ন বিনিয়োগ সংস্থার নাম করে টোপ দেয়। বিনিয়োগে রাজি করাতে সম্ভাব্য শিকারের সামনে ভুয়ো আর্থিক লাভের প্রমাণ পেশ করে। প্রচুর পরিমাণে রিটার্ন পাওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা বিনিয়োগ করানো হয়। যখন কেউ আর্থিক ভাবে প্রতারিত হওয়া টের পায় তার অনেক আগেই সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে তাকে হটিয়ে দেওয়া হয়। আর্থিক জালিয়াতির জন্য প্রাথমিক ভাবে ভারত, আমেরিকা, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মানুষই টার্গেট সাইবার অপরাধীদের।
২০২৩ সালে ভারতে এক লাখের বেশি আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের প্রথম ৪ মাসেই ৪৫৯৯ ডিজিটাল ফ্রড বা জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এতে ১২০ কোটি টাকা হারিয়েছে। ৬২,৬৮৭টি ভুয়ো আর্থিক বিনিয়োগের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২.২২ বিলিয়ন টাকা অর্থাৎ ২২২ কোটি টাকা।
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘সাইবার দোস্ত’ (Cyber Dost) সতর্ক করেছে, আইফোনের মাধ্যমে নতুন রকমের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। আইমেসেজের মাধ্যমে আইফন ব্যবহারকারীদের কাছে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজ পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, তাদের নামে জিনিসপত্র অর্ডার করা হয়েছে। কিন্তু ভুল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। সেখানে চলে যাবে জিনিস। সন্দেহজনক লিঙ্ক থাকছে মেসেজে। ক্লিক করলেই সর্বস্বান্ত হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেসপন্স করার কথা বলা হচ্ছে মেসেজে। ওয়েব লিঙ্ক দেওয়া থাকছে। না হলে পার্সেল অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
কী পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সাইবার দোস্তের তরফে
১) সন্দেহজনক মেসেজের সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
২) অচেনা ব্যক্তির কাছ থেকে মেসেজ আসা বন্ধ করতে রিড রিসিট অপশন ডিসেবল করুন।
৩) বৈধ সংস্থা পার্সেল অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার হুমকি দেবে না।
৪) অচেনা ব্যক্তিকে ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করবেন না। টাকা পাঠাবেন না।
আরও পড়ুন
নগদহীন ডিজিটাল পেমেন্ট বাড়াচ্ছে বেশি বেশি কেনাকাটার প্রবণতা, চাঞ্চল্যকর তথ্য সমীক্ষায়