বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, ২০২4 সালে বিশ্বের মোট যক্ষ্মা আক্রান্তের মধ্যে সর্বাধিক রোগী ভারতের। বিশ্বব্যাপী মোট সংক্রমণের ২৫ শতাংশই ভারতের অংশ। তবে চিন্তার মধ্যেই স্বস্তি— দেশে টিবি সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের টিবি সংক্রমণ কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। যেখানে বিশ্বব্যাপী গড় কমার হার মাত্র ১২ শতাংশ।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভারত ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, চিন, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও বাংলাদেশ মিলে বিশ্বে মোট টিবি আক্রান্তের ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভারত শীর্ষে। বহু-ঔষধ-প্রতিরোধী টিবি (MDR/RR-TB)-র ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে— ২০২৪ সালে বিশ্বে এই ধরনের রোগীদের এক-তৃতীয়াংশই ভারতের।
টিবি-জনিত মৃত্যুতেও ভারতের অবস্থান উদ্বেগজনক। WHO জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে HIV-নেগেটিভ মানুষের টিবি মৃত্যুর ৬৯ শতাংশ ঘটেছে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, যার মধ্যে ভারতের অংশ ২৮ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ভারতের মৃত্যুহার ২০১৫ সালে প্রতি লাখে ২৮ জন থেকে ২০২৪ সালে কমে হয়েছে ২১ জন— যা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
চিকিৎসা ও শনাক্তকরণ পদ্ধতির উন্নতি টিবি মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বাস্থ্যপরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ভিত্তিক নজরদারির ফলে ২০১৫ সালে যে টিবি চিকিৎসা কভারেজ ছিল মাত্র ৫৩ শতাংশ, তা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। ২০২৪ সালে দেশে ২৬.১৮ লক্ষ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যেখানে আনুমানিক সংক্রমণ ২৭ লক্ষ।
মন্ত্রকের দাবি, যক্ষ্মা শনাক্তকরণে নতুন পদ্ধতি গ্রহণের ফলে “মিসিং কেস”— অর্থাৎ যেসব রোগী আগে সরকারিভাবে শনাক্ত হতেন না— সেই সংখ্যা ২০১৫ সালের প্রায় ১৫ লক্ষ থেকে ২০২৪ সালে নেমে এসেছে এক লক্ষেরও নিচে। পাশাপাশি, বহু-ঔষধ-প্রতিরোধী টিবি রোগীর সংখ্যা গত কয়েক বছরে তেমন বৃদ্ধি পায়নি।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া TB Mukt Bharat Abhiyan এই অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে কেন্দ্রের দাবি। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ১৯ কোটিরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এতে ২৪.৫ লক্ষ টিবি রোগী শনাক্ত করা গেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ উপসর্গবিহীন। চিকিৎসা সাফল্যের হারও বেড়ে ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব গড় ৮৮ শতাংশের চেয়ে বেশি।
রিপোর্টে একদিকে যেমন ভারতের উপর যক্ষ্মার বড় বোঝা তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে দেশের টিবি মোকাবিলার অগ্রগতি এবং সংক্রমণ কমানোর সাফল্যকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি, চিকিৎসার প্রসার, এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সহায়তা ভারতের টিবি নিয়ন্ত্রণে আগামী দিনে আরও জোরদার হতে পারে।
আরও পড়ুন: শুধু স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যেও চ্যাম্পিয়ন বেবিকর্ন! জানুন এই কচি মকাইয়ের ৬টি গুণ
