সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের (SVB) মুখ থুবড়ে পড়ার পরে সঙ্কটে আমেরিকান এবং ইউরোপীয় ব্যাঙ্কগুলির। এ দিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের এই উদ্বেগ ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
এসভিবি-র পতন
আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হার বাড়াতে শুরু করল আর বিপদ শুরু হল সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের। গত ৮ মার্চ ব্যাঙ্কটি বন্ডে বিনিয়োগ বাবদ ১৮০ কোটি ডলার ক্ষতির কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এর পরে আমানতকারীরা আর দেরি করেননি। রাতারাতি তাঁদের জমা টাকা এই ব্যাঙ্ক থেকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেন তাঁরা। গত ১০ মার্চ আমেরিকার ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বন্ধ করে দেয় সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক বা এসভিবি-কে।
আরবিআই-এর দৃঢ়তা
এর পর একের পর এক পশ্চিমী ব্যাঙ্কে উদ্বেগ। দেশে তিনটি ব্যাঙ্কে ভরাডুবি হয়েছে। একটি ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে নিয়ন্ত্রকরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ব্যাঙ্কিং সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে, গত সপ্তাহে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছিলেন যে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী। আরবিআই-এর মতে, যে কোনো ব্যাঙ্কের সিআরএআর কমপক্ষে ৯ শতাংশ হওয়া উচিত। সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকের শেষে এটি ছিল ১৬ শতাংশ। তারই রেশ ধরে বিশ্লেষকদের আশ্বাসবাণী।
ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ইতিবাচক দিক
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্লেষকরা বলছেন যে গত কয়েক বছরে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অনাদায়ী ঋণের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং মূলধনও যথেষ্ট পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে। এই সব কারণের উপর ভর করেই বিশ্বব্যাপী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় উদ্বেগ ভারতকে প্রভাবিত করবে না। রিপোর্ট বলছে, গত পাঁচ বছরে ভারতীয় ব্যাঙ্কের এনপিএ অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ১০.৮ শতাংশ, যা ২০২২ সালের মার্চ মাসে ৫.৯ শতাংশে এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার নমনীয়তা
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (SBI) প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে, ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তুলনামূলক নমনীয়তা রয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ খুব কম, যে কারণে ভারতের উপর কোনো ব্যাঙ্কিং সংকটের প্রভাব সামান্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের সংকটের পর ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অনদায়ী ঋণের অবসান ঘটছে, ব্যাঙ্কগুলো পর্যাপ্ত মূলধন বাড়িয়েছে। গত তিন বছরে দুটি ভারতীয় ব্যাঙ্ক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। যে কারণে, সরকার আমানত বিমা কভার বাড়িয়েছে ৫,০০,০০০ টাকা করেছে, যা আগে ছিল ১,০০,০০০ টাকা।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে আজ DA মামলা শুনানি