নয়াদিল্লি: এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা ভোটে। তার আগে বড়োসড়ো ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেন, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে এনডিএ ৪০০-র বেশি আসন পাবে।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবিকে বিজেপি তাঁর দাবিকে আস্থা বলে অভিহিত করছে। অন্য দিকে, বিরোধী দলগুলি একে অহংকার বলে কটাক্ষ করছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উত্তর লোকসভায় জবাবি ভাষণের সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমবারের মতো লোকসভা নির্বাচনে আসনের টার্গেট সামনে রেখেছেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। গোটা দেশ বলছে আবকি বার, ৪০০ পার। দেশের মেজাজ বলছে, এনডিএ ৪০০ পার করবেই। ভারতীয় জনতা পার্টি ৩৭০ আসন অবশ্যই পাবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই দাবির পর বিরোধীদের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে পাল্টা বিবৃতি। কেউ কেউ এমনও প্রশ্ন তুলছেন, তা হলে কি ভোটের আগে থেকেই ইভিএম সেট করা হয়েছে? আবার অনেকেই, প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে স্বপ্ন বলেও কটাক্ষ করছেন।
অন্য দিকে, রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মোদীর এই দাবির পক্ষে গত তিন বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রবণতা এবং বিশেষ এক অঙ্ক থাকতে পারে।
পরিসংখ্যান বলছে, শেষ তিনটি অর্থাৎ, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এমন ৯৫টি আসন রয়েছে, যেগুলিতে তিনবারই বিজেপি জিতেছে। অন্য দিকে, এই তিনটি নির্বাচনে মাত্র ১৭টি আসনে তিন বারই জিতেছিল কংগ্রেস। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এমন ১৭৩টি আসন রয়েছে, যেখানে দু’বারই জিতেছিল বিজেপি, সেই জায়গায় মাত্র ৩৪টি আসনে দু’বারই জিতেছিল কংগ্রেস। এই আসনগুলিকেই বিজেপি এবং কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে ধরা যেতে পারে।
এ বার দুর্বল আসনগুলির দিকে তাকানো যেতে পারে। দেশের ১৯৯টি এমন আসন রয়েছে, যেখানে বিজেপি শেষ তিনটি লোকসভা আসনে জিততে পারেনি। অন্য দিকে, ৩০৯টি এমন আসন রয়েছে, যেখানে কংগ্রেস এই তিনটি নির্বাচনের একটিতেও জিততে পারেনি। এ ছাড়া ৭৬টি এমন আসন রয়েছে, যেখানে বিজেপি এক বার মাত্র জিতেছে। এ ধরনের কংগ্রেসের খাতায় রয়েছে এমন ১৮৩টি আসন, যেখানে এক বার মাত্র জিতেছে।
২০১৯ সালের নির্বাচনে, বিজেপি ৪৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এবং ৫০ শতাংশের বেশি ভোটের ব্যবধানে ২২৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৬। অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৮৮টি আসন বেড়েছে। এ বার এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদীর। অর্থাৎ, বিজেপি অনুমান করছে যে তারা ২২৪টি আসনে আগের জয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে।
কিন্তু তর্কের খাতিরে ২৭০টি আসনে জিততে পারলেও ৩৭০ আসন তার থেকে অনেক দূরে। এর জন্য রয়েছে আরও একটি ইতিবাচক দিক। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নিজেদের জেতা ৭৫ শতাংশ আসনে এক লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে জিতেছিল বিজেপি। এক লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে ২১০টি আসন জিতেছিল বিজেপি। সেই জায়গায় মাত্র ১০টি আসনে ১০ হাজার ভোটের ব্য়বধানে এবং ৩০টি আসনে ১০ থেকে ৫০ হাজারের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল বিজেপি।
এমনটাও হতে পারে, ২০১৯-এর বেশি ভোটের ব্যবধানে জেতা আসন বিজেপির হাতে থাকবে এবং এর সঙ্গে আরও ৬৭টি আসন যুক্ত হতে পারে। এখন প্রশ্ন হল ৬৭টি আসন কী ভাবে বাড়বে? এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ৭২টি আসনে বিজেপির ভোটের হার ৫ শতাংশ বাড়লে এবং বিরোধীদের ভোট কমে গেলে ৩৮ শতাংশ আসন বাড়তে পারে।
আর এটা হতে পারে ছয় রাজ্যের ফলাফলের উপর নির্ভর করে। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, বিহার, তামিলনাড়ু, কর্নাটকে দলের পারফরম্যান্স ভালো হলে বিজেপির পক্ষে ৩৭০-এর ভবিষ্যদ্বাণী মিলিয়ে দেওয়া সহজ হতে পারে। তবে, সবকিছুই নির্ভর করছে পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপি ৩৭০, এনডিএ ৪০০ পার’, সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদীর