Homeখবরদেশপ্রকৃতি শিক্ষা দিচ্ছে বার বার, তবুও আমরা শিক্ষা নিচ্ছি না

প্রকৃতি শিক্ষা দিচ্ছে বার বার, তবুও আমরা শিক্ষা নিচ্ছি না

প্রকাশিত

সময় ক্রমশ আধুনিক হচ্ছে, আমরা উন্নত হচ্ছি, নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছি। জীবন আরও জটিল হচ্ছে। আর সময় যত এগোচ্ছে, ততই বোঝা যাচ্ছে যে প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়। আর হব নাই বা কেন, যে ভাবে আমরা প্রকৃতির ওপরে অত্যাচার করে চলেছি, প্রকৃতি তার বদলা তো নেবেই।

গত কয়েক দিনে উত্তর ভারতে কী হয়েছে, তা অনেকেই আমরা জেনে গিয়েছি। বৃষ্টি রেকর্ড ভেঙেছে। হিমাচল, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লিতে যা বৃষ্টি হয়েছে তা কল্পনাতীত। দু’ তিন দিনে গড়ে পাঁচশো থেকে ছ’শো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচলে। দিল্লিতে দু’ দিনে হয়েছে তিনশো মিলিমিটার। এর ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।

বৃষ্টি এখন থেমেছে কিন্তু অসম্ভব বিপর্যয় ডেকে এনেছে সর্বত্র। হিমাচলের একের পর এক গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন। বহু জায়গায় রাস্তা নেই। আগের রাতেও যে বাড়িটা জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে ছিল,সকালে দেখা গিয়েছে সেটা রীতিমতো উবে গিয়েছে। ফুলেফেঁপে ওঠা একের পর এক নদী তার গতিপথে যা পেয়েছে, তাকে নিয়েই নীচে নেমেছে।

সেই জল এ বার পৌঁছে গিয়েছে দিল্লিতে, যমুনা হয়ে। শুধু যমুনা-তীরবর্তী তথাকথিত বস্তি এলাকা নয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলিও এখন জলের তলায়। লালকেল্লার সামনে কোমরসমান জল। দিল্লিতে বন্যা আগেও হয়েছে, কিন্তু এ বারের মতো পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি। যমুনার জলস্তর বেড়ে হয়েছে ২০৮.৬৬ মিটার, যা সর্বকালীন রেকর্ড।

অতিরিক্ত জল সাধারণত নদী দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দিল্লিতে যমুনার যা অবস্থা, তা দিয়ে জল বেরোবে কী, বাড়তি জলধারণের ক্ষমতাই তো প্রায় নেই। সেই কারণেই তার জল এখন দিল্লি শহরের ভেতরে।

delhi2

সংবাদমাধ্যমও এই বিষয়ে একটা বিশেষ কাজ করে শাসকদের সুবিধা করে দেয়। নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারা শাসকদের কোনো প্রশ্নই করে না। তাদের নজর এই সমস্ত ইস্যুর দিকে পড়েই না। তাদের নজর থাকে ‘হিন্দু মুসলমান’ নয়তো ‘পাকিস্তানের ঘুম উড়ে গেছে’, কিংবা ‘মন্দির-মসজিদ’-এ। এই নাগরিক সমস্যাগুলিকে নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করারও কেউ নেই। ফলে সারা বছর নদী সংস্কার নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্চ্য নেই। সরকারেরও বিশেষ ভাবনা নেই এই সব ব্যাপারে।

কিন্তু বছরে একবার বন্যার সময় এলে তখনই বোঝা যায় যে সমস্যাটা কতটা গভীরে চলে গিয়েছে। দিল্লির বন্যা নিয়ে দিল্লি এবং হরিয়ানা সরকারের চাপানউতোর চলছে। কারণ হরিয়ানার হথনিকুণ্ড ব্যারেজ থেকে যমুনা নদীতে জল ছাড়া হয়েছে, যার ফলে যমুনায় জলস্তর রেকর্ড ভাবে বাড়ছে।

বিষয়টা হল নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাতে হলে ব্যারেজ দিয়ে নদীর জল তো ছেড়েই দিতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা তো অন্য জায়গায়। দীর্ঘদিন এই নদী সংস্কার হয় না, নদী মজে গিয়েছে, গভীরতা নেই। ফলে তার বাড়তি জলধারণের কোনো ক্ষমতাই নেই। দুই সরকার চাপানউতোর না করে যদি নদী সংস্কার নিয়ে কিছু ভাবত, তা হলে হয়তো বন্যার সমস্যাটা এতটা গভীর হত না।

শুধু সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কোনো লাভ নেই, আমরা সাধারণ মানুষও সমান ভাবে দায়ী। সন্দেহ নেই, বিপর্যয় প্রাকৃতিক কারণেই হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির পরবর্তী বিপর্যয়ের জন্য আমরাই তো দায়ী। পাহাড়ে নিয়ম না মেনে নির্মাণকাজ, নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রোধ করে দেওয়া, উন্নয়নের নামে গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করা, ট্রেন লাইন তৈরি করা। একের পর এক পাপ করে চলেছি আমরা।

২০১৩-এর কেদার-বিপর্যয় একটা বড়ো শিক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু তাতে যে আমরা বিন্দুমাত্র সচেতন হইনি, আবার প্রমাণিত। কেদারের পবিত্রতা এখন নষ্ট হতে বসেছে। এক আধ্যাত্মিক পীঠস্থান থেকে কেদার এখন বাণিজ্যিক পীঠস্থান হয়ে উঠেছে। মানুষজন ভক্তির জন্য কম, রিল বানানোর জন্য কেদার যাচ্ছে বেশি করে। হেলিকপ্টারের আওয়াজ আর ধোঁয়া কেদার এবং তার সংলগ্ন পাহাড়ে বিপদ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে।

delhi 3

তবে আমি নিশ্চিত আমরা কোনো দিন সচেতন হবও না। তাই আগামী দিনে বিপদ আরও বাড়তেই থাকবে। অনেকে তো মনে করেন যে এর পর বড়ো বিপদ হানা দেবে সিকিমে।

কী বললেন, আমাদের দিকে বৃষ্টি কম তো আমরা কেন এই সব নিয়ে ভাবব? ভাবতে তো হবেই। বৃষ্টি এই মুহূর্তে কম হচ্ছে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ দরকার, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের এই হাল হতে। একটা অতিবৃষ্টির দফা আসুক, প্রকৃতি আবার আমাদের দেখিয়ে দেবে। ২০২১-এ দক্ষিণবঙ্গের হাল বেহাল হয়েছিল। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি চললে উত্তরবঙ্গের হাল বেহাল হয়ে যায়। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

একটা কথা মাথায় রাখুন, জলবায়ু পরিবর্তন মানে কিন্তু গরম কালে গরম বেশি নয়। জলবায়ু পরিবর্তন মানে সব কিছুর অস্বাভাবিক আচরণ, সেটা অতিবৃষ্টি হোক, অতি-তুষারপাত হোক বা খরা হোক। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কারা?

সাম্প্রতিকতম

তীব্র জল সংকটের দিকে এগোচ্ছে দক্ষিণ ভারত! জলধারণ ক্ষমতা নেমে ১৭ শতাংশ, কী পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে

নয়াদিল্লি: গরমে তীব্র জলসংকট। দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে জলসঞ্চয়ের বিষয়টিও। অন্ধ্রপ্রদেশ,...

আইপিএল ২০২৪: সেঞ্চুরি বেয়ারস্টোর, সঙ্গী শশাঙ্ক-প্রভসিমরান, টি২০ ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে কেকেআর-কে উড়িয়ে দিল পাঞ্জাব  

কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর): ২৬১-৬ (ফিল সল্ট ৭৫, সুনীল নারিন ৭১, অর্শদীপ সিং ২-৩৫)...

প্রধানমন্ত্রীর ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের সমর্থনে লারা, কী বললেন বলি অভিনেত্রী?

কিছুদিন আগে হায়দরাবাদ থেকে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, কার হাতে কত সম্পত্তি আছে তা সমীক্ষা করে দেখা হবে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তা করবে।

ভোট দিন আর ডিসকাউন্ট পান! নির্বাচনী মরশুমে অফারের ছড়াছড়ি

দেশে লোকসভা নির্বাচনের উত্তেজনা তুঙ্গে। প্রথম দফার ভোট ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। আজ, শুক্রবার দ্বিতীয়...

আরও পড়ুন

তীব্র জল সংকটের দিকে এগোচ্ছে দক্ষিণ ভারত! জলধারণ ক্ষমতা নেমে ১৭ শতাংশ, কী পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে

নয়াদিল্লি: গরমে তীব্র জলসংকট। দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে জলসঞ্চয়ের বিষয়টিও। অন্ধ্রপ্রদেশ,...

ভোট দিন আর ডিসকাউন্ট পান! নির্বাচনী মরশুমে অফারের ছড়াছড়ি

দেশে লোকসভা নির্বাচনের উত্তেজনা তুঙ্গে। প্রথম দফার ভোট ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। আজ, শুক্রবার দ্বিতীয়...

বিয়েতে পাওয়া ‘স্ত্রীধনে’ অধিকার নেই স্বামীর, নিলেও ফেরাতে হবে, জানাল সুপ্রিম কোর্ট

মামলায় স্বামী আদালতে জানান, আগে থেকে তাঁর পরিবার বিপুল দেনায় ডুবে ছিল। সেই দেনা শোধ করতে সব অর্থ খরচ করতে হয়েছে।