Homeখবরদেশচৌরি চৌরার ঘটনায় অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার গান্ধীজির! কী বলেছিলেন নেতাজি

চৌরি চৌরার ঘটনায় অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার গান্ধীজির! কী বলেছিলেন নেতাজি

প্রকাশিত

শীর্ষ গুপ্ত

ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশের (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) গোরখপুর জেলার এক অখ্যাত ধূলিধূসর জনপদ চৌরি চৌরা। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই চৌরি চৌরা। ১৯২২-এর অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে চৌরি চৌরার হিংসাত্মক ঘটনায় মহাত্মা গান্ধী ক্ষুব্ধ হন এবং আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

চৌরি চৌরার ঘটনা সম্পর্কে সুভাষচন্দ্র বসু লিখেছেন, “নতুন বৎসর ১৯২২ সাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের উৎসাহকে জাগাইয়া তুলিতে মহাত্মা বিশেষ এক চেষ্টা করিলেন। সুতরাং, তাঁহার পরিকল্পনার শেষ পর্যায় – অর্থাৎ কর-বন্ধের দিকে অগ্রসর হওয়া স্থির হইল। ১৯২২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী তিনি বড়লাট লর্ড রেডিং-এর নিকট এই বলিয়া এক চরমপত্র পাঠাইলেন যে, সাত দিনের মধ্যে যদি গভর্নমেন্ট হৃদয়ের পরিবর্তন না দেখান, তাহা হইলে তিনি গুজরাটে (বোম্বাই প্রেসিডেন্সীর উত্তরাংশ) বারদৌলী মহকুমায় সাধারণভাবে কর-বন্ধ শুরু করিবেন। বলা হইয়াছিল যে, বারদৌলী মহকুমায় এমন অনেক লোক ছিলেন যাঁহারা দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধীর সহিত নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলনে কাজ করিয়াছেন এবং ঐ জাতীয় কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছেন। বারদৌলীতে কর-বন্ধ আন্দোলনের সূচনা হইবে দেশব্যাপী ঐরূপ একটি আন্দোলন শুরু করার সঙ্কেত। বাঙ্গলায় যুগপৎ কর-বন্ধ আন্দোলন (গ্রামের পুলিশ ইত্যাদির ব্যয় নির্বাহের জন্য সকল গ্রামবাসীকে সেই সময়ে যে চৌকিদারী কর দিতে হইত উহা বন্ধ করিয়া দেওয়া) শুরু করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থাও করা হইল এবং যুক্তপ্রদেশ ও অন্ধ্রও (মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর উত্তরাঞ্চল) ঐ প্রকার আন্দোলনের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত ছিল। মহাত্মার চরমপত্র সমগ্র দেশে দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি করিল। প্রত্যেকে রুদ্ধনিশ্বাসে প্রহর গনিতে লাগিলেন। সহসা বিনামেঘে ব্রজপাত ঘটায় দেশবাসী স্তব্ধ ও হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন। চৌরি-চৌরার ঘটনা এই পরিস্থিতির উদ্ভব করিল।” (ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ১৯২০-৪২ প্রথম খণ্ড, শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু, নেতাজী রিসার্চ ব্যুরো, কলকাতা, মাঘ ১৩৭৩)।

চৌরি চৌরার ঘটনা

চৌরি চৌরায় কী ঘটেছিল তা বোঝার জন্য ফিরে যাওয়া যাক ঠিক ১০০ বছর আগে। মূল ঘটনা ঘটেছিল ১৯২২-এর ৫ ফেব্রুয়ারি। যদিও কিছু কিছু সূত্র বলে, ৪ ফেব্রুয়ারি। মাংসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে অসহযোগ আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকেরা এর দু’-তিন দিন আগে স্থানীয় বাজারে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আয়োজন করেন। চৌরী চৌরা থানার পুলিশ ওই প্রতিবাদসভায় যোগদানকারী মানুষদের মারধর করে এবং স্থানীয় কয়েক জন নেতাকে জেলে পুরে দেয়। প্রত্যুত্তরে ৫ ফেব্রুয়ারি (মতান্তরে ৪ ফেব্রুয়ারি) ওই বাজার এলাকাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হয়।

সভায় যোগ দেওয়ার জন্য হাজার দুয়েকেরও বেশি মানুষ স্থানীয় থানার পাশ দিয়ে মিছিল করে যাচ্ছিলেন। এঁদের মধ্যে কয়েক জন থানার সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন এবং ধৃত নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি করতে থাকেন।

সেই সময় সেখানে থাকা থানাদার বিক্ষুব্ধ জনতাকে তাদের পিছু হটতে বলে। জনতা কর্ণপাত না করায় থানাদার শূন্যে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। পুলিশের এই আপাত দুর্বলতা মিছিলকারীদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। শোনা যায়, সেই সময় তাঁরা নাকি বলছিলেন, “গাঁধীজির কৃপায় বুলেট জল হয়ে গেছে।” এর পরই জনতাকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালায়। বুলেটবিদ্ধ হয়ে তিন জন মারা যান এবং আরও কয়েক জন আহত হন। চোখের সামনে সহ-আন্দোলনকারীদের মৃত্যু দেখে জনতা প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। ভয়ে পুলিশকর্মীরা থানায় ঢুকে যায়। উত্তেজিত জনতা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে বাজার থেকে কেরোসিন এনে থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে ২৩ জন পুলিশ মারা যায়। অধিকাংশই আগুনে পুড়ে। যারা আগুন থেকে বেঁচে গিয়েছিল তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

এই হিংসাত্মক ঘটনায় মর্মাহত হন গান্ধীজি। গান্ধীজি আন্দোলনকে কোনো মতেই হিংসার মুখে ঠেলে দিতে রাজি ছিলেন না। এর আগে বোম্বাইয়ে (১৭ নভেম্বর, ১৯২১) এবং মাদ্রাজে (১৩ জানুয়ারি, ১৯২২) হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলেও চৌরি চৌরার ঘটনা ছিল তাঁর কাছে ‘চরমতম অপমান’। তিনি লিখেছিলেন, “Madras (Malabar) did give the warning, but I heeded not. But God spoke clearly through Chauri Chaura” (মাদ্রাজ আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিল, কিন্তু আমি কান দিইনি। কিন্তু চৌরি চৌরার মাধ্যমে ঈশ্বর আমাকে পরিষ্কার বলে দিলেন)। গান্ধীজি সিদ্ধান্ত করলেন অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবেন। সেইমতো ১২ ফেব্রুয়ারি বারদৌলিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভায় প্রস্তাব গৃহীত হল এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিল।
সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজি তথা কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে একে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেন।

সুভাষচন্দ্র বলেন, “সেই সময়ে সর্বাধিনায়কের আদেশ পালন করা হইল কিন্তু কংগ্রেস শিবিরে রীতিমত একটা বিদ্রোহ দেখা দিল। দেশব্যাপী আন্দোলনকে গলা টিপিয়া হত্যা করিবার জন্য কেন যে মহাত্মা চৌরিচৌরার বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনাকে কাজে লাগাইয়াছিলেন, ইহা কেহই বুঝিয়া উঠিতে পারেন নাই। জনসাধারণের ক্ষোভ আরও অধিক হইয়াছিল এই কারণে যে, বিভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করা মহাত্মা প্রয়োজন বোধ করেন নাই এবং দেশের পরিস্থিতিও মোটামুটিভাবে আইন অমান্য আন্দোলনের সাফল্যের পক্ষে অত্যধিক অনুকূল ছিল। জনগণের উৎসাহ যখন চরম সীমায় পৌঁছিতে চলিয়াছে ঠিক তখনই পশ্চাদপসরণের আদেশ দেওয়া জাতীয় বিপর্যয় হইতে কম কিছুই নয়।” (ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ১৯২০-৪২ প্রথম খণ্ড, শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু, নেতাজী রিসার্চ ব্যুরো, কলকাতা, মাঘ ১৩৭৩)।

সাম্প্রতিকতম

বৃষ্টি উপেক্ষা করেই জুনিয়র ডাক্তাররা হাঁটলেন স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত, মহানগরী দেখল আরও মিছিল

কলকাতা: গত দুদিন ধরেই আকাশ চোখ রাঙাচ্ছে। চলছে রাতভর দিনভর বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টি...

টালা থানার ওসির পাশে নিচুতলা পুলিশ কর্মীরা, আইনি লড়াইয়ের জন্য একজোটের উদ্যোগ

টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের গ্রেফতারির প্রতিবাদে একজোট হচ্ছেন কলকাতা পুলিশের নিচু স্তরের কর্মীরা। রবিবার পুলিশ ক্লাবে বৈঠক করে আইনি লড়াইয়ের জন্য তহবিল গঠন এবং মিডিয়া সেল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

১৬ জিবি পর্যন্ত RAM ও এআই ফিচারযুক্ত নয়া মডেলের স্মার্টফোন আনল TECNO

TECNO POVA 6 Neo 5G ফোনের 6GB RAM+128GB স্টোরেজ মডেলের দাম রাখা হয়েছে ১২,৯৯৯ টাকা। 8GB RAM+256GB স্টোরেজ সহ ফোনটির টপ মডেল ১৩,৯৯৯ টাকা দাম রাখা হয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য লাইভ টিভি অ্যাপ আনল বিএসএনএল

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন লাইভ টিভি অ্যাপ আনল রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল। এর মধ্যেই...

আরও পড়ুন

‘জনগণের রায়ে হবে অগ্নিপরীক্ষা,’ দুদিন কাজ চালিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেবেন কেজরিওয়াল

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দলীয় বৈঠকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনের আগে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। কেজরিওয়াল বলেন, “মানুষের রায়ই আসল ন্যায়বিচার।”

ক্ষমতায় এলে বিহারে মদে নিষেধাজ্ঞা এক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুতি প্রশান্ত কিশোরের

জন সুরাজ প্রধান প্রশান্ত কিশোর ঘোষণা করলেন, ক্ষমতায় এলে বিহারে মদ নিষেধাজ্ঞা এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রত্যাহার করবেন। তিনি তেজস্বী যাদবের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নেতৃত্ব নিয়েও কটাক্ষ করেন।

প্রতি ৮ মিনিটে একজন তরুণ ভারতীয় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, ল্যানসেট জার্নালের চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে...
ইন্টারভিউয়ে কীরকম শরীরী ভঙ্গিমা থাকা উচিত বাড়তি মেদ ঝরানোর নয়া ট্রেন্ড ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ কী?