“তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”।
এটা শুধুমাত্র একটা স্লোগান ছিল না। এই আহ্বানই ভারতে দেশপ্রেমের জোয়ারে নতুন গতি সৃষ্টি করেছিল, যা ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তি হয়ে ওঠে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা শুধু দেশ নয়, বিদেশেও বহু আলোচিত বিষয়। দেখে নেওয়া যাক তাঁর জীবন সম্পর্কিত ১০টি চমকপ্রদ তথ্য।
১. প্রাথমিক শিক্ষার পর কটকের কটকের র্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভরতি হন সুভাষ। এর পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। ১৯১৯ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য লন্ডনে যান তিনি। এহেন সুভাষ শ্রমজীবীদের জন্য নদিয়ার বরেণ্য সন্তান স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমন্তকুমার সরকারের স্থাপিত একটি অবৈতনিক নৈশবিদ্যালয়ে মাঝে মাঝে শিক্ষকতাও করতেন।
২. আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। কিন্তু জাতির প্রতি অটল ভালোবাসার কারণে তিনি ব্রিটিশদের চাকরি বর্জন করে সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেন।
৩. স্বামী বিবেকানন্দকে নিজের আধ্যাত্মিক গুরুর আসনে বসিয়েছিলেন সুভাষ। অন্য দিকে, তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস।
৪. ১৯২৩ সালে সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতির পাশাপাশি বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ সালে হরিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৯-এ তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তিনি নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন। নিজের দল অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।
৫. ১৯৩০ সালে ইউরোপ যাত্রা করেন সুভাষ। সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল নামে একটি বই রচনা করেন। ১৯৩৫ সালে বইটি লন্ডনে প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ সরকার তা নিষিদ্ধ করে।
৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশরা গৃহবন্দি করলে আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানি পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুভাষ। সেখান থেকে মস্কো গমন। মস্কো থেকে রোম হয়ে তিনি জার্মানি পৌঁছান।
৭. বার্লিনে ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের স্বাধীনতার জন্য সাহায্য চান জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারের। ১৯৪৩ সালে জার্মানি ত্যাগ করেন সুভাষ।
৮. ১৯৪২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে চালু হয় ‘আজাদ হিন্দ রেডিও’। এই উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে ভারতীয়দের মধ্যে প্রচার করা। এই রেডিওতে, ১৯৪৪ সালের ৬ জুলাই মহাত্মা গান্ধীকে ‘জাতির জনক’ হিসাবে সম্বোধন করেছিলেন সুভাষ।
৯. ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে জার্মানি থেকে জাপান নিয়ন্ত্রিত সিঙ্গাপুরে পৌঁছান সুভাষ। সেখান থেকে তিনি তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ‘দিল্লি চলো’র ডাক দেন।
১০. সুভাষের জন্ম ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইহোকু বিমানবন্দরের একটি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে একাংশের তরফে দাবি করা হলেও প্রকৃত কারণ আজও অজানা। ভারত সরকারের তরফেও এই মহামানবের মৃত্যু নিয়ে কোনো যথার্থ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়তে পারেন: নেতাজিকে নিয়ে আর এক ‘মহাগুজব’! কী বলছেন গবেষক