Home খবর দেশ ২৩ বার ব্যর্থ, অবশেষে তিনি পারলেন, প্রমাণ করলেন চেষ্টা করলে সবই হয়

২৩ বার ব্যর্থ, অবশেষে তিনি পারলেন, প্রমাণ করলেন চেষ্টা করলে সবই হয়

0
ছবি সৌজন্যে দ্য টাইমস অভ ইন্ডিয়া।

জবলপুর (মধ্যপ্রদেশ): শেষ পর্যন্ত তিনি পারলেন। তাঁর বাড়ি নেই, পরিবার নেই, সঞ্চয় নেই, বাঁধা কোনো চাকরি নেই। কিন্তু এখন তিনি গর্ব করে বলতে পারেন, “মেরে পাস ডিগ্রি হ্যায়”। তিনি রাজকরণ বরউয়া। ২৫ বছরের চেষ্টায় হলেন অঙ্কে এমএসসি।

৫৬ বছরের রাজকরণ জীবনের প্রায় অর্ধেকটা কাটিয়ে দিলেন তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য। ২৩ বার তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এমএসসি পরীক্ষায়। কিন্তু হাল ছাড়েননি। এরই মাঝে সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে ডাবল শিফ্‌টে ডিউটি করে গিয়েছেন, করেছেন নানা রকম সব কাজ। তবু তিনি ভালোবাসাটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবং অবশেষে ২০২১ পেলেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি – অঙ্কে এমএসসি।

“কিন্তু স্বপ্নপূরণের এই আনন্দটা আমি ঘরে বসেই উদযাপন করলাম। লাফিয়ে উঠেছি, নিজেকেই বাহবা দিয়েছি। কিন্তু ঘরের বাইরে যেতে পারিনি, কাউকে বলতেও পারিনি। বললেই আমার চাকুরিদাতারা আমার দৃষ্টান্ত দিয়ে নিজেদের সন্তানদের বিদ্রূপ করবেন। তাঁরা আমাকে দেখিয়ে বলবেন, দেখো এই বয়সেই পড়ে চলেছে। আমি ওঁদের বিব্রত করতে চাইনি। তাই নিজে নিজেই এই সাফল্য উদযাপন করেছি আর নিজের মধ্যেই সব কিছু রেখে দিয়েছি”, এ কথা বলেন রাজকরণ।

রাজকরণ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এখন আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এ বার আমি সবাইকে বলে বেড়াতে পারি।”

এরই মাঝে এই রাজকরণকে নিয়ে ২০১৫ সালে ‘দ্য টাইমস অভ ইন্ডিয়া’য় একটা রিপোর্ট বেরিয়েছিল। সেই রিপোর্ট রাজকরণকে এগিয়ে যেতে আরও উদ্বুদ্ধ করেছিল। “সেটা ছিল আমার ১৮ বার চেষ্টার বছর। মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তার পরই রিপোর্টটা বেরোল। দেখলাম মানুষ আমাকে অন্য চোখে দেখছে। আমার খোঁজে টিভি চ্যানেলগুলো এল। এই ব্যাপারটা আমাকে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছিল”, বলছিলেন রাজকরণ।

মাসিক ৫০০০ টাকা বেতনে রাজকরণ রাত্রে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। দিনের বেলায় বসে থাকতেন না। থাকা, খাওয়া এবং মাসিক দেড় হাজার বিনিময়ে একটা বাংলোবাড়ির দেখভাল করতেন। “কোনো রকমে পেট চালাতাম। কিন্তু গত ২৫ বছরে বই কেনা, পরীক্ষার ফি দেওয়া, এমএসসি ডিগ্রি পাওয়ার জন্য আর যা যা খরচ করা, সব মিলিয়ে আমার মনে হয় ২ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে”, বলেন রাজকরণ। তাঁর কথায়, “আমি শুধু চেয়েছিলাম পরীক্ষাটায় পাশ করতে। আমাকে যেন বলা হয় ম্যাথামেটিক্সে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট।”

কিন্তু বিয়ে করলেন না কেন? – রাজকরণ হতবাক, “বিয়ে? আমাকে কে বিয়ে করবে? তা ছাড়া আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমি তো আমার স্বপ্নকে বিয়ে করেছি।”

কিন্তু অঙ্কে স্নাতকোত্তর পাওয়ার জন্য এত উতলা কেন? – “১৯৯৬-তে এমএ করার পর আমি একটি স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হই। এবং সেখানকার ছাত্রদের সঙ্গে আমার কথা হত। আমি বাচ্চাদের যে ভাবে অঙ্ক শেখাই তাতে আমার সহকর্মীরা আমার প্রশংসা করতেন। তখনই ভাবলাম, আচ্ছা অঙ্কে এমএসসি করলে কেমন হয়। সেই দিনগুলোতে ইলেকটিভ সাবজেক্টেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করা যেত। আমি জবলপুরের রানি দুর্গাবতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কে এমএসসি কোর্সে ভরতি হওয়ার আবেদন করি। এবং সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়”, জানান রাজকরণ।

রাজকরণ বুঝতে পারেননি কতটা শক্ত হবে এই কোর্স। আসলে তখন জানতেনও না, ‘২৫ বছরের তপস্যা’ শুরু হল। “আমি যে এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছেলে সেটা তখন বুঝতে পারিনি”, হাসতে হাসতে বললেন রাজকরণ।

“১৯৯৭-এ এমএসসি ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা দিলাম। পাশ করতে পারলাম না। পরবর্তী দশ বছরে অঙ্ক বিষয়ক পাঁচটি পত্রের মাত্র একটিতে আমি পাশ করি। কিন্তু কখনও হাল ছাড়িনি। লোকে কী বলছে তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। আমার মন ছিল আমার স্বপ্নের দিকে। এর পর আমি দুটো পত্রে পাশ করলাম। শেষ পর্যন্ত ২০২০-এ কোভিড অতিমারির সময়ে আমি এমএসসি ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা পাশ করি। আর ২০২১-এই সেকেন্ড তথা ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় পাশ করি। নিজেকে নিয়ে আমি গর্ব অনুভব করি”, বললেন রাজকরণ।

তাহলে রাজকরণ কী শিখেছেন এত দিনে? “চেষ্টা আর ধৈর্য্য। চেষ্টা আর ধৈর্য্য আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে”, নিজের কাহিনি শুনিয়ে স্পষ্ট বললেন রাজকরণ।

তথ্যসূত্র: দ্য টাইমস অভ ইন্ডিয়া

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version