মহাকুম্ভকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলে মন্তব্য করে বিজেপির প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এলেন উত্তরাখণ্ডের জ্যোতির মঠের ৪৬তম শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী।
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের বিশৃঙ্খলা, ভয়াবহ যানজট, দূষিত গঙ্গার জল এবং পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা মৃত্যুকুম্ভ! আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি, গঙ্গা মাকেও সম্মান করি। কিন্তু এখানে কোনও পরিকল্পনাই নেই… কতজন মানুষ মারা গিয়েছেন?”
এই মন্তব্যের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তীব্র সমালোচনা করা হয়। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য হিন্দু ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। তবে শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী মহাকুম্ভের অব্যবস্থার জন্য যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “যদি ৩০০ কিলোমিটার যানজট হয়, তা হলে সেটা অব্যবস্থা নয় তো কী? পুণ্যার্থীদের ২৫-৩০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে, যেখানে তাঁরা স্নান করেছেন, সেই জলও দূষিত। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেই জল স্নানের উপযুক্ত নয়, তবু তাঁদের বাধ্য করা হচ্ছে এতে ডুব দিতে।”
শঙ্করাচার্যের প্রশ্ন, “যখন আগেই জানা ছিল যে কোটি কোটি মানুষ এখানে আসবেন, তখন কেন পরিকল্পনা করা হল না? কেন বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি? ১২ বছর আগে থেকেই তো এই আয়োজনের প্রস্তুতির কথা ছিল, তাহলে আগেভাগে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন?”
এদিকে, বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারী মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে “সনাতন ও হিন্দু বিদ্বেষী” বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “গতকাল অখিলেশ যাদব মহাকুম্ভে আকবরকে খুঁজছিলেন, রাহুল গান্ধী এখনও সেখানে যাননি। তাঁরা সনাতন ঐক্যকে ভয় পান এবং তাঁদের হিন্দু বিদ্বেষ স্পষ্ট।”
অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক স্বামী জিতেন্দ্রানন্দ সরস্বতী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওডিশা এবং পূর্ব ভারতের অন্যান্য জায়গা থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে মহাকুম্ভে আসতে দেখে অস্থির হয়ে পড়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারের জন্যই এটা মৃত্যুকুম্ভ হয়ে উঠবে।”
বিরোধী দলগুলোর দাবি, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃতদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি। তবে বিজেপি নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।