১০০ দিনের কাজ নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত। সোমবার বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতিদের মন্তব্য, “আপনারা মামলা তুলে নেবেন, না কি আমরা খারিজ করব?” এর পরই আদালত কেন্দ্রের আর্জি খারিজ করে দেয়। এই রায়ের ফলে ১০০ দিনের কাজ ফের রাজ্যে শুরু করার নির্দেশ কার্যকর হবে, এবং কেন্দ্রকে বকেয়া অর্থ মঞ্জুর করতেই হবে।
গত ১৮ জুন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের বেঞ্চ রায়ে বলেছিলেন, “দুর্নীতি রুখতে কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে শর্ত দিতে পারে, কিন্তু প্রকল্প বন্ধ রাখা যাবে না।” সেই নির্দেশই সোমবার সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখল।
এর আগে হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ২০২২ সালের আগের সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগে পদক্ষেপ করা যেতে পারে, কিন্তু বর্তমান প্রকল্প চালু রাখতে হবে।
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মাত্র ৩০ সেকেন্ডে কেন্দ্রের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষের স্বার্থে আদালত রায় দিয়েছে। কেন্দ্র অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের টাকা আটকে রেখেছিল।”
১০০ দিনের কাজ বন্ধের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি হাই কোর্টে মামলা করেছিল। সংগঠনের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই রায়ের ফলে রাজ্যের দরিদ্র শ্রমিকেরা আবার কাজের সুযোগ পাবেন।”
অন্যদিকে ক্ষেতমজুর সমিতি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে শ্রমিকদের মর্যাদা এবং সংগঠিত লড়াইয়ের জয় হিসাবে দেখছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা পথে এবং আদালতে লড়াই চালিয়ে যাবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (Twitter)-এ লেখেন, “যাঁরা মনে করেন বাংলাকে হেনস্থা করা যায়, চুপ করিয়ে দেওয়া যায় — আজকের রায় তাঁদের মুখে গণতান্ত্রিক চপেটাঘাত।”
এর আগে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধের প্রতিবাদে অভিষেক দিল্লিতে ‘বঞ্চিতদের’ নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না পেয়ে কলকাতায় ফিরে রাজভবনের সামনে টানা পাঁচ দিনের ধর্না দেন তিনি। পরে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি জমা দেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের মজুরি দেওয়া বন্ধ ছিল। কেন্দ্রের অভিযোগ— প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দে দুর্নীতি হয়েছে, প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে অন্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে। সেই কারণেই বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছিল।তবে আদালতের এই রায়ের ফলে প্রায় চার বছর পরে রাজ্যে ফের শুরু হতে চলেছে ১০০ দিনের কাজ, যা বাংলার লক্ষাধিক শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো আনতে পারে।
আরও পড়ুন: বুথভিত্তিক তুলনায় মিল মাত্র ৫৫%! এসআইআরে নাম কাটা যেতে পারে প্রায় ১ কোটি ভোটারের
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

