Home খবর দেশ ‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়ায় উদ্ধার করা হল আটকে থাকা শ্রমিকদের, জেনে নিন কী সেই...

‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়ায় উদ্ধার করা হল আটকে থাকা শ্রমিকদের, জেনে নিন কী সেই প্রক্রিয়া

0

দেহরাদুন: যন্ত্র নয়, শেষ পর্যন্ত মানুষের কায়িক পরিশ্রমই সাফল্য এনে দিল উত্তরকাশীর সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারে। গত ১২ নভেম্বর ভোরে সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। সেই সময়ে ওই সুড়ঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের ৪১ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাঁরা সবাই আটকে পড়েন। শুরু হয় উদ্ধারকাজ।

গত ১৭ দিন ধরে নানা ভাবে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা হয়েছে। আর এই কাজে সবেচেয়ে বেশি ভরসা করা হয়েছিল মার্কিন ‘অগার মেশিন’-এর উপর। এটি হল তুরপুনের মতো একটি খননযন্ত্র। এই যন্ত্র ধ্বংসস্তূপ কেটে কেটে এগোচ্ছিল আর পিছনে এগোচ্ছিল ৯০০ মিমি ব্যাসযুক্ত পাইপ যার মধ্যে দিয়ে বের করে আনা হবে আটকে থাকা শ্রমিকদের।

সুড়ঙ্গের মুখ থেকে ৬০ মিটার দূরে ছিলেন আটকে থাকা শ্রমিকেরা। ‘অগার মেশিন’ তার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। আটকে থাকা শ্রমিকদের থেকে ১০-১২ মিটার দূরে সে ভেঙে পড়ল। ১৩ দিনের মাথায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এই বিপত্তি ঘটল। এর আগে মাঝেই মাঝেই যান্ত্রিক গোলযোগে উদ্ধারকাজ থমকে গিয়েছে। সেই গোলযোগ শুধরে আবার শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। কিন্তু এ বার একেবারে চরম দশা। ধ্বংসস্তূপের ভিতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে গেল আমেরিকায় তৈরি খননযন্ত্র। এত দিন ধরে অবশ্য আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে নানা ভাবে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। পাইপের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা চলেছে। পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

এ বার একসঙ্গে দুটো কাজ। এক, ভাঙা খননযন্ত্রের টুকরোগুলো সরাতে হবে এবং দুই, বাকি ১০-১২ মিটার পথ করতে হবে। খননযন্ত্রের সব টুকরো সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনার পর খনিশ্রমিকেরা সেখানে ঢুকে যন্ত্র ছাড়াই খোঁড়া শুরু করেন। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়া বা ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’। এ ছাড়া অবশ্য সুড়ঙ্গের উপর দিক থেকেও উল্লম্ব ভাবে খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। ৮৬ মিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল ৪২ মিটার।

‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়া কী

বিভিন্ন খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিশেষত কয়লাখনিতে এই প্রক্রিয়া খুবই পরিচিত। এই কাজে দক্ষ শ্রমিকেরা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। তাঁরা অল্প জায়গা নিয়ে সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক যেমন করে গর্ত খোঁড়ে ইঁদুর। প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ তুলে তাঁরা আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন।

‘ইঁদুরের গর্ত খোঁড়া’র জন্য প্রথম দফায় ১২ জন অভিজ্ঞ খনিশ্রমিককে ঘটনাস্থলে আনা হয়। তাঁরা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে এগোন। সুড়ঙ্গের ভিতরে পৌঁছে এক জন দেওয়াল খুঁড়তে থাকেন, দ্বিতীয় জন সেই ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয় জন তা চাকা লাগানো গাড়িতে তুলে দেন। সেই গাড়ি ধ্বংসস্তূপ বহন করে সুড়ঙ্গের বাইরে নিয়ে যায়। শেয পর্যন্ত মনুষ্য-নির্ভর এই পদ্ধতিতেই এল সাফল্য।

‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়া কি নিষিদ্ধ

এই পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক বলে ২০১৪ সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পিছনে কিন্তু যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কারণ এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে গিয়ে প্রচুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ করার আর-একটা বড়ো কারণ পরিবেশ দূষণ।

এই প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পরেও দেশের বহু জায়গায়, বিশেষ করে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে এই পদ্ধতি আকছার অবলম্বন করা হয়। আর তা করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ২০১৮ সালে এক প্লাবিত খনিতে অবৈধভাবে খনন চালাতে গিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। দু’ মাস ধরে উদ্ধারকাজ চালিয়ে মাত্র ২টি দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। বাকিদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ রকমই আর-একটি ঘটেছিল ২০২১-এ। সেই ঘটনায় ৫ জন খনিশ্রমিক প্লাবিত খনিতে আটকা পড়েছিলেন। একমাস ধরে চেষ্টা চালানোর পর উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ততদিনে ৩টি দেহ পাওয়া গিয়েছিল। বাকি ২ জনের আর হদিস মিলল না।

সিলকিয়ারায় ‘ইঁদুর-গর্ত’ পদ্ধতি প্রসঙ্গে কী বলল এনডিএমএ

শেষ পর্যন্ত সেই নিষিদ্ধ ‘ইঁদুর-গর্ত’ পদ্ধতি অবলম্বন করেই সিলকিয়ারা টানেলে আটকে থাকা সব শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করে আনা সম্ভব হল। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলা হলে এনডিএমএ-র (ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি) সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন উদ্ধারকাজ চলাকালীন সাংবাদিকদের বলেন, “‘র‍্যাট-হোল মাইনিং’ নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু এখানে একজন র‌্যাট-হোল খনিশ্রমিকের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।”

লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসনাইনের কথার সঙ্গেই আর-এক আধিকারিক বলেন, “খনিতে কয়লা তোলার জন্য যে ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’ পদ্ধতি অবলম্বন করা হত তা ২০১৪ সালে নিষিদ্ধ করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এটা একটা দক্ষতা, যা নির্মাণকাজে মাঝেমাঝে ব্যবহার করা হয়। পরিস্থিতিটা খনিশ্রমিকদের ক্ষেত্রে সুখকর নয়। শুধু ‘র‍্যাট-মাইন’ই নয়, যাঁরা ‘গ্যাস-কাটিং’-এর কাজে যুক্ত থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সহজ নয়। তাঁরা একঘণ্টা কাজ করেন, তার পর বেরিয়ে আসেন। কিন্তু এখানে একটা বিশেষ অবস্থায় এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে হচ্ছে, মানুষের জীবন বাঁচানোর ব্যাপার। এবং আমরা আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করার জন্য ‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ কর্মীদের দক্ষতা ও ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছি।”

আরও পড়ুন

রাজ্যের ৩ জন-সহ সব শ্রমিককেই নিরাপদে বাইরে আনা হল, উদ্ধার অভিযানের প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী    

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version