তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু তুরস্কেই ন’হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অন্য দিকে, সিরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬৬২ জন। শুধু তাই নয়, আহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। হাজার হাজার ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়া মানুষের সন্ধানে দিনরাত কাজ করে চলেছে উদ্ধারকারী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনুসন্ধান দলগুলিও ধ্বংসাবশেষে আটকে পড়া মানুষের খোঁজ চালিয়ে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। কিন্তু বিপর্যয়ের ৭২ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে প্রাণের ধুকপুকুনি যতটুকু শোনা যাচ্ছিল, এখন তার সিংহভাগই স্তব্ধ।
গত সোমবার দফায় দফায় ভূমিকম্পে ধুলিস্যাৎ হয়েছে হাজার হাজার বিল্ডিং। ঠিক কত সংখ্যক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়েছিলেন, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা নিরূপণও সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে তুষারপাত ও হাড় কাঁপানো ঠান্ডার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা কিন্তু সাহায্য পৌঁছতে বিলম্বের কারণে থেমে গিয়েছে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া বহু মানুষের প্রাণের ধুকপুকুনি।
দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ মানুষ মসজিদ, স্কুল বা অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সেই সব জায়গাগুলিতে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে এবং খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে বাধ্য হতে হচ্ছে তাদের। শুধু তাই নয়, খাবার-সহ অন্যান্য সামগ্রীর অভাবও দেখা দিয়েছে তাদের সামনে।
এ ব্যাপারে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় নেট মাধ্যমে। সমালোচনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলির মধ্যে একটি, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কাহরামানমারাস পরিদর্শন করেন এরদোগান। নিজের প্রতিক্রিয়ায় সমস্যার কথা স্বীকারও করেন তিনি। তাঁর কথায়, “অবশ্যই, কিছু ত্রুটি রয়েছে। কেন এমন ঘটেছে সেটা তো স্পষ্ট। কিন্তু এই ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকা সম্ভব নয়।”
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তুরস্কের ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় এখন প্রায় ৬০ হাজার ত্রাণকর্মী রয়েছেন। কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই ব্যাপক যে অনেক মানুষের কাছেই এখনও সাহায্য পৌঁছায়নি। সেখানে জীবন-মৃত্যুর লড়াই চলছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা আমাদের কোনো নাগরিককে রাস্তায় ছেড়ে দেব না। ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করা হবে”। তিনি আরও জানান, দেশের সাড়ে ৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৩০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্য দিকে, সংবাদ সংস্থা এএফপি-র সাংবাদিক এবং নেটব্লকস ওয়েব মনিটরিং গ্রুপের মতে তুর্কির মোবাইল নেটওয়ার্কে টুইটারও কাজ করছিল না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ভোর থেকে দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক, সিরিয়া এবং পার্শ্ববর্তী লেবানন, ইজরায়েলের মতো চারটি দেশ। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে তুরস্কে। সেখানে প্রথমবার রিখটার স্কেলে ৭.৮। তার পর ৭.৬ ও তৃতীয়বার ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পের জেরে শুরু হয় মৃত্যুমিছিল। তার পর থেকে যতই ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা হচ্ছে, ততই বেরিয়ে আসছে নিস্তেজ, নিথর মানুষদের দেহ।
আরও পড়ুন: উপহার পাওয়া গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স করবেন বলেছিলেন হিরো আলম, সেই গাড়ির ফিটনেস নেই, কর বাকি কয়েক লক্ষ