লখনউ: প্রয়াগরাজের মহা কুম্ভ মেলার এলাকা ঘিরে একটি নতুন জেলা গঠনের ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। নতুন এই জেলার নাম রাখা হয়েছে ‘মহা কুম্ভ মেলা’ জেলা। যোগী আদিত্যনাথ সরকার জানিয়েছে, রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করতে এবং মহা কুম্ভ মেলার সুবিন্যস্ত ও সফল আয়োজন নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই ঘোষণার ফলে উত্তরপ্রদেশে বর্তমানে জেলার সংখ্যা ৭৬-এ পৌঁছাল। নতুন জেলার প্রশাসনিক কাঠামো মহা কুম্ভ মেলার আয়োজনকে আরও সুশৃঙ্খল ও কার্যকর করতে সাহায্য করবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
নতুন জেলার সীমানা ও প্রশাসনিক কাঠামো
মহা কুম্ভ মেলা জেলার সীমানায় থাকবে সংলগ্ন সমস্ত গ্রাম এবং মেলার প্যারেড এলাকা। নতুন গঠিত এই জেলার প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে মেলা আধিকারিকদের।
মেলা আধিকারিকদের ক্ষমতা:
- মেলা আধিকারিকরা কার্যনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
- এছাড়াও, ২০২৩ সালের ভারতীয় নাগরিক প্রতিরক্ষা কোড এবং উত্তরপ্রদেশ রাজস্ব বিধি অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন আইনি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
মহা কুম্ভ মেলা ২০২৫: বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ
মহা কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছর অন্তর আয়োজিত হয় এবং এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ২০২৫ সালের মেলা ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। মেলার প্রথম শুভ মুহূর্ত হবে ২৯ জানুয়ারি, সিদ্ধি যোগে।
গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর পবিত্র মিলনস্থলে স্নানের মাধ্যমে আত্মিক শুদ্ধিকরণের বিশ্বাসে এই মেলায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেন। শুধু ভারত থেকেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এই মহা আয়োজনের সাক্ষী হতে আসেন।
মহা কুম্ভ প্রচার: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ
মহা কুম্ভ ২০২৫-কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও জনপ্রিয় করতে উত্তরপ্রদেশ সরকার বিশেষ প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করেছে।
- দেশ ও বিদেশে রোডশো এবং ইভেন্ট: মেলার গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রচারে ভারত এবং বিদেশে বিভিন্ন রোডশো এবং সাংস্কৃতিক ইভেন্ট আয়োজন করা হবে।
- বিশ্বব্যাপী আমন্ত্রণ: উত্তরপ্রদেশ সরকার দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালদের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ জানাবে। মন্ত্রীরা বিভিন্ন রাজ্যে সফর করে এই আমন্ত্রণ পৌঁছে দেবেন।
মেলার প্রস্তুতি ও সুযোগ-সুবিধা
মহা কুম্ভ মেলায় লাখ লাখ তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
- যাতায়াত ও আবাসন: তীর্থযাত্রীদের জন্য উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অস্থায়ী আবাসনের সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
- স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা: মেলার পুরো এলাকা জুড়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।
- ডিজিটাল পরিষেবা: মেলার বিভিন্ন কাজকর্ম সহজতর করতে এবং তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করতে আধুনিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে।
মেলা পরিচালনায় প্রযুক্তির ব্যবহার
মহা কুম্ভ মেলার জন্য সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। স্মার্ট ক্যাম্প, ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ইউনিট, এবং জিপিএস-সক্ষম পুণ্যার্থীদের ট্র্যাকিং সিস্টেম-সহ বিভিন্ন আধুনিক উদ্যোগের মাধ্যমে মেলার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করার লক্ষ্য রয়েছে।
মহা কুম্ভের গুরুত্ব
মহা কুম্ভ মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, ভারতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আত্মিক সংযোগের অন্যতম বৃহৎ উদাহরণ। এটি বিশ্ববাসীর কাছে ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচায়ক।