কয়েক দিন সারা দেশে আলোড়ন ফেলেছিল উত্তরকাশীর নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গ ধসের ঘটনা। ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গের ভিতর আটকে ছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। টানা ১৭ দিনের অবিরাম চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ‘চারধাম অল ওয়েদার রোড’ প্রকল্পের অধীনে সিলকিয়ারা টানেলের নির্মাণকাজে একটি বড় বাধা তৈরি হয়েছে। কবে নাগাদ নির্মাণকাজ শুরু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নির্মাণ সংস্থা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আধিকারিকরা বলছেন, টানেল নির্মাণ শুরুর আগে সুড়ঙ্গের ‘স্বাস্থ্য মেরামত’ করতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন একটি নির্মাণ সংস্থাকে বেছে নেওয়া হবে। এর জন্য সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের কাছে বাড়তি অর্থ বরাদ্দের দাবিও করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার দিন, অর্থাৎ ১২ নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত, বারকোট এবং সিলকিয়ারা উভয় দিক থেকেই টানেল নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু করার বিষয়ে উপর মহল থেকে কোনো নির্দেশও আসেনি বলে জানা গিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলে প্রায় ৪৮০ মিটার খনন করা এখনও বাকি রয়েছে। ১৭ দিনের দীর্ঘ উদ্ধার অভিযানের পর, এখন বড় প্রশ্ন হল টানেল নির্মাণের কাজ আবার কবে শুরু হবে? টানেল নির্মাণে বাধা হয়ে ওঠা সুড়ঙ্গের ভেঙে পড়া অংশের মেরামত কী ভাবে এবং কে করবে?
ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)-এর কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছেন। তবে, নির্মাণ সংস্থা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কিছুটা হলেও সন্দেহ দূর করেছে। কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার রাজেশ পানওয়ার সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন, একটি বিশেষজ্ঞ দল সুড়ঙ্গের ভেঙে পড়া এবং দুর্বল অংশগুলি সমীক্ষা করবে। এর পরে, ওই অংশ এবং দুর্বল স্থানগুলির মেরামতের জন্য একটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এ জন্য আলাদা বাজেট দাবি করা হবে।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, আগাম পরিকল্পনা না করে নির্মাণকাজ শুরু হলে আবারও ধস নামার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিকদের উদ্ধারে একাধিক পদ্ধতিতে খনন করা হয়েছে। ফলে ওই জায়গার যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই অনুযায়ী আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিলকিয়ারা টানেল বিপর্যয় পশ্চিম হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্রের সংবেদনশীলতা এবং জটিলতার বিষয়গুলি পুরোপুরি স্পষ্ট করে দিয়েছে। এই এলাকায় বাস্তবায়িত সমস্ত প্রকল্পের পুঙ্খানুপুঙ্খ অডিট হওয়া উচিত। এ ছাড়াও, হিমালয় অঞ্চলে ভবিষ্যতের সমস্ত প্রকল্পগুলিকে বন্ধ করতে হবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিবেশগত ঝুঁকি যাচাইয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সুড়ঙ্গ সংকট মিটে যাওয়ার পর এমনটাই দাবি করেছেন বিরোধী দলের নেতা যশপাল আর্য।