যৌথ সংসদীয় কমিটির (JPC) দেওয়া সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল অনুমোদন করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিলটি ১০ মার্চ শুরু হওয়া পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।
বিজেপি নেতা জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বাধীন যৌথ কমিটি এই বিলের পর্যালোচনা করে ১৪টি সংশোধনী গ্রহণ করে এবং ২৭ জানুয়ারি এটি অনুমোদন দেয়। কমিটির ৬৫৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদের উভয় কক্ষে পেশ করা হয়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় বন্দর বিলের পাশাপাশি ওয়াকফ সংশোধনী বিলকেও সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে। বাজেট অধিবেশনের বাকি সময়ের মধ্যে তা পাস করানোর পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের।
বিলটিতে মোট ৬৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে—২৩টি শাসক দল বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএর সাংসদদের প্রস্তাবিত এবং ৪৪টি বিরোধী দলের। তবে বিজেপি ও তার মিত্র দলের ১৬ জন এবং বিরোধী দলের ১০ জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও দলীয় লাইনের ভিত্তিতে বিরোধী দলের সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়।
নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয় যখন বিরোধী সাংসদরা অভিযোগ করেন যে তাদের আপত্তি সংবলিত অংশ যৌথ কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
সরকার দাবি করে, তারা কোনো অনিয়ম করেনি এবং কমিটির চেয়ারম্যানের অধিকার রয়েছে এমন অংশ বাদ দেওয়ার, যা কমিটির প্রতি ‘অবমাননাকর’ হতে পারে। তবে বিরোধীদের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে তাদের আপত্তির নোট মূল রূপেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ ওয়াকফ আইনের (১৯৯৫) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা পরিবর্তন করেছে, যা ভারতে মুসলিম ধর্মীয় ও দাতব্য সম্পত্তি পরিচালনার নীতিমালা নির্ধারণ করে।
প্রধান সংশোধনীগুলো হল:
- বর্তমান ওয়াকফ আইনের কিছু ধারা বাতিল করা।
- কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াকফ সংস্থাগুলোতে মুসলিম নারীদের পাশাপাশি অ-মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
- কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ না কি সরকারি মালিকানাধীন, তা নির্ধারণের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের হাতে দেওয়া।
- ওয়াকফ সংস্থায় একজন অ-মুসলিম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া।
বিরোধীদের অভিযোগ: ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা
বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এই সংশোধনী ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা দুর্বল করার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে। বর্তমান আইনে ওয়াকফ বোর্ড যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে দাবি করতে পারে, যা নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে।
বিরোধিতার কারণে বিলটি ২০২৩ সালের আগস্টে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। মন্ত্রিসভার অনুমোদিত এই বিলটি বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে সংসদে আলোচনার জন্য উত্থাপন করা হবে এবং পরে পাস করানোর চেষ্টা করা হবে।