কুরিয়ার জালিয়াতি নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রতারকরা সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলতে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী ভাবে নিরাপদে থাকবেন?
সব ক্ষেত্রেই বলা হয়, কোনো অজানা নম্বর থেকে আসা প্রলোভন মূলক ফোন কল ধরবেন না। কিন্তু ব্যস্ত ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনে এই পরামর্শ প্রায়ই অবাস্তব হয়ে ওঠে। প্রতারকরা প্রায়শই এই বাস্তবতাকে কাজে লাগায়। নিজেকে গ্রাহক পরিষেবা কর্মী বা কাস্টমস অফিসার হিসাবে জাহির করে তারা সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে। আসলে তাদের একটাই লক্ষ্য ফাঁদে ফেলে শিকার করা। এর জন্য তারা অভিনব কিছু কৌশল নিয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে কতকটা একই রকমের ফাঁদ পাততেও দেখা যায়।
যেমন, প্রতারকরা প্রায়ই ফোন করে দাবি করে যে কোনো আইনি কর্তৃপক্ষ একটি পার্সেল আটক করেছে, যাতে মাদক, পাসপোর্ট ইত্যাদির মতো অবৈধ পদার্থ রয়েছে, যার সঙ্গে আপনার নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। ফোনকারী তারপর সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ করে। পাশাপাশি এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আইনজীবীর কাছে যেতেই বারণ করে। ভয় দেখায়, এতে জটিলতা আরও বাড়বে। তার চেয়ে ভালো সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার। ফোনকারী বলে, সে-ই এই কাজটা করে দেবে। এর জন্য কত টাকা লাগবে, ধীরে ধীরে সেসব হিসেবও জানিয়ে দেয়।
তবে এগুলো পুরনো কায়দা। এখন আবার কুরিয়ার কোম্পানির নাম করে নতুন ফন্দি আঁটছে প্রতারকরা। জালিয়াতরা সন্দেহভাজন লোকদের কল করে, তাদের জানায় যে তাদের নামে মাদক বা অন্যান্য অবৈধ আইটেম সমেত একটি কুরিয়ার প্যাকেজ আটকানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে। যেমন, অবৈধ আইটেমগুলি একটি চালানে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়। অযাচিত কলের পাশাপাশি এসএমএস বা ইমেল পাঠানো হয়। এগুলো সবই করা হয় কোনো নামকরা কুরিয়ার কোম্পানির ভুয়ো পরিচয় দিয়ে। এ ক্ষেত্রে প্যাকেজের বিনিময়ে অর্থ বা ব্যক্তিগত তথ্যের দাবিও করা হয়।
আইনি পদক্ষেপ এড়াতে অনেকেই টাকা দিতেও বাধ্য হন। তথ্য বলছে, শুধু গত বছরেই কুরিয়ার কোম্পানির নামে সংঘটিত কেলেঙ্কারিতে লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো আইনি কর্তৃপক্ষ নয়, সরাসরি কুরিয়ার কোম্পানির নামেই জাল পাতছে প্রতারকরা। কোভিড মহামারির পর এ ধরনের জালিয়াতি খুবই বেড়েছে। কুরিয়ার পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওটিপি চেয়েও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাফ করে দিতে পারে প্রতারকরা।
দেশে অনলাইন জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতার বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচ হিসাবে, সতর্ক এবং সক্রিয় হওয়া অপরিহার্য। নিজেকে রক্ষা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেমন, মনে রাখবেন যে কুরিয়ার অপারেটররা ট্রানজিটে চালানের জন্য অযাচিত ফোনকল, মেল, টেক্সট বা ইমেলের মাধ্যমে টাকা বা ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য অনুরোধ করে না। উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, তারা কোনো জাতীয় বা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের হয়ে কাজ করার জন্য অনুমোদিত নয়। ফলে কুরিয়ার কোম্পানির নাম করে এ ধরনের বার্তা এলে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ!
আরও পড়ুন: ৬টি নিয়ম মেনে চললে অনেকটাই এড়ানো যাবে ক্যানসার, বলছে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির গবেষণা