নিজস্ব প্রতিনিধি: ডুয়ার্সের জঙ্গল ভেদ করে যাওয়া রেললাইনে মালগাড়ির ধাক্কায় ফের মৃত্যু হল হাতির। একটি নয়, তিনটি। দুই শাবক-সহ মা হাতির প্রাণ গেল। সোমবার সকালে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাওয়া এলাকায়। এই ঘটনায় সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় আলিপুরদুয়ার-শিলিগুড়ি রুটে ট্রেন চলাচল।
এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় বন্যপ্রাণপ্রেমীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এত রকম সতর্কতা নেওয়া সত্ত্বেও ডুয়ার্সে কেন বারবার ট্রেনের ধাক্কায় বন্যপ্রাণীর প্রাণ যায়। কী ভাবে ট্রেনের সঙ্গে হাতির ধাক্কা লাগল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে রেল।
সোমবার সকালে স্থানীয় মানুষজন রেললাইনের মধ্যে দুটি বাচ্চা হাতির দলাপাকানো দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এক শাবকের দেহ মেলে লোহার পাতে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে থাকা অবস্থায়। আর অন্যটির দেহ আটকে ছিল মালগাড়ির চাকায়। আর মা-হাতি মালগাড়ির ধাক্কায় লাইন থেকে ৫০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে মারা যায়।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল সোয়া ৭টা নাগাদ রাজাভাতখাওয়া ও কালচিনি স্টেশনের মাঝখানে শিলিগুড়িগামী মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ৩টি হাতির। থমকে যায় মালগাড়ি। রেলকর্মীরা এসে হাতির দেহাবশেষ ট্রেনের নীচ থেকে বার করেন। মায়ের সঙ্গে দুই শাবক রেললাইন পেরোতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে রেলের অনুমান।
আলিপুরদুয়ারের বিভাগীয় রেল আধিকারিক অমরজিৎ গৌতম জানান, “ট্রেনের ধাক্কায় রাজাভাতখাওয়ার শিকারিগেট এলাকায় ৩টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকায় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রিত থাকার কথা। তার পরেও কী ভাবে হাতির সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কা লাগল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রেনচালকরা মত্ত অবস্থায় ছিলেন কি না তা জানতে তাঁদের মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে।”
রেললাইন পেরোতে গিয়ে যাতে বন্যপ্রাণীদের প্রাণ না যায় তার জন্য জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া রেললাইনের দু’ ধার দিয়ে সেন্সরযুক্ত অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেলমন্ত্রক। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেলপথে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দু’ পাশে ১০ মিটারের মধ্যে হাতি থাকলে রেলের চালকের কাছে সিগন্যাল চলে যাওয়ার কথা।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়েক বছর ধরে বহু দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে রেলের দাবি। তা সত্ত্বেও গত ১০ অগস্ট ডুয়ার্সে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক অন্তঃসত্ত্বা হাতির। এই সব ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ বন্যপ্রাণপ্রেমীরা। তাঁদের দাবি, যদি চালকদের গাফিলতিতে এই মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে তাদের শাস্তি চাই।
আরও পড়ুন
দার্জিলিঙে গেলে এ বার থেকে দিতে হবে ‘ট্যুরিস্ট ট্যাক্স’, হোটেল ব্যবসায়ীদের আপত্তি