শ্রয়ণ সেন
আতঙ্ক! আতঙ্ক! আতঙ্ক!
সমাজমাধ্যমের পাতা ওলটালেই গরম নিয়ে চূড়ান্ত আতঙ্কজনক খবর! মানুষ গরম অনুভব করবে কি, আগেই তো সেই খবর দেখে ভিরমি খেয়ে যাবে। ‘ভয়ংকর দাবদাহ’, ‘রাস্তায় বেরোলেই হিটস্ট্রোক’-এর মতো খবরে ছেয়ে রয়েছে আমাদের চারদিক।
তবে সত্যি কী জানেন! এখনও পর্যন্ত আমাদের দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলা তাপপ্রবাহের কবলেই পড়েনি। অন্তত গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান তাই বলছে। এই সময়কালে দক্ষিণবঙ্গের কোথায় কত পারদ ছিল এবং তা স্বাভাবিকের থেকে কতটা বেশি আসুন তা একবার দেখে নিই…
আসানসোল- ৪০ (+২)
বাঁকুড়া- ৪১.২ (+৩)
বর্ধমান- ৪০ (+২)
মেদিনীপুর- ৪২.১ (+৫)
ঝাড়গ্রাম- ৪৩ (+৫)
কৃষ্ণনগর- ৩৯.২ (+৩)
কলকাতা দমদম- ৩৯.৫ (+৩)
কলকাতা আলিপুর- ৩৯.৭ (+৪)
কলকাতা সল্টলেক- ৪০.৩ (+৪)
কলকাতা হাওড়া- ৩৯ (+৪)
পানাগড়- ৪১.৭ (+৩)
মুর্শিদাবাদ- ৪১.৪ (+৪)
পুরুলিয়া- ৪০.২ (+২)
শান্তিনিকেতন- ৩৯ (+২)
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ওই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে অন্তত পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে এবং তা চল্লিশ ডিগ্রির ওপরে রেকর্ড করা হয়, সেই পরিস্থিতিকে তাপপ্রবাহ বলা হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় পারদ ৪০-এর ওপরে থাকলেও শুধুমাত্র মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রাম ছাড়া কোথাও তা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি ওপরে ছিল না। ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে তাপপ্রবাহ ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দক্ষিণ ২৪ পরগণার সব এলাকাতেই তাপমাত্রা চল্লিশের বেশ কিছুটা নীচে ছিল, তাই সেগুলো বিচার্যের মধ্যে আনিনি।
অনেক জায়গায় গরম সংক্রান্ত যে খবর করা হচ্ছে, তাতে তাপপ্রবাহের আগে ‘ভয়াবহ’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রকৃত অর্থে তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিকের থেকে সাত-আট ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি ওঠে, সে ক্ষেত্রে ‘ভয়াবহ’ শব্দটি জুড়তে পারে। এখনও পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি দক্ষিণবঙ্গে তৈরি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রামে যেটা হয়েছে তাকে বড়োজোর সাধারণ তাপপ্রবাহ বলা যেতে পারে।
তবে হ্যাঁ, যা পরিস্থিতি তাতে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলি তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি এড়িয়ে গেলেও বাকি জেলায় তা শুরু হয়ে যাবে। কলকাতাতেও ছোটোখাটো তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তা চলবে অন্তত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত।
কিন্তু এ বারের গরম যে গত বারের গরমের দাপটের থেকে কম, সেটা পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে। এ বার দেখে নিই গত বছর কোন জায়গায় কবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল
আসানসোল- ৪৩.৩ (১৯ এপ্রিল)
বাঁকুড়া- ৪৪.৩ (২০ এপ্রিল)
বর্ধমান- ৪৩.২ (১৮ এপ্রিল)
মেদিনীপুর- ৪২ (২০ এপ্রিল)
কৃষ্ণনগর- ৪১.২ (১৯ এপ্রিল)
কলকাতা দমদম- ৪১.৬ (১৭, ১৯ এপ্রিল)
কলকাতা আলিপুর- ৪১ (১৪ এপ্রিল)
কলকাতা সল্টলেক- ৪২.৬ (১৯ এপ্রিল)
কলকাতা হাওড়া- ৪০.৫ (১৯ এপ্রিল)
পানাগড়- ৪৩.৭ (১৯ এপ্রিল)
মুর্শিদাবাদ- ৪৪.৪ (১৯ এপ্রিল)
পুরুলিয়া- ৪৩.৬ (১৯ এপ্রিল)
শান্তিনিকেতন- ৪৩.৬ (২০ এপ্রিল)
এটা মাথায় রাখতে হবে যে গত বছর টানা ৯ দিন গোটা দক্ষিণবঙ্গ তাপপ্রবাহের কবলে ছিল। এর মধ্যে পাঁচ দিন কলকাতায় (১৩,১৪,১৭,১৯ এবং ২০ এপ্রিল) এবং টানা ন’দিন পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা চল্লিশের ওপরে ছিল। তুলনায় এই বছরে এখনও পর্যন্ত কলকাতার তাপমাত্রা চল্লিশ পেরোয়নি।
তাই এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে তাপপ্রবাহ শুরু হলেও সামগ্রিক ভাবে তাপপ্রবাহ নেই। আর ‘ভয়াবহ’ তাপপ্রবাহ’ তো কোথাওই নেই।
আরও একটা ভুল ধরিয়ে দিতে চাই। ‘দাবদাহ’ মানে কিন্তু জঙ্গলের আগুন, মানে দাবানল। তীব্র গরম বোঝানোর জন্য আমরা যে ‘দাবদাহ’ শব্দটি ব্যবহার করি তা সম্পূর্ণ ভুল। দক্ষিণবঙ্গের কোনো শহর কোনো দিনও ‘দাবদাহের’ কবলে পড়বে না কারণ এই সব শহরে কোনো জঙ্গলের অস্তিত্বই নেই। যদি তা থাকত, তা হলে তাপমাত্রার এই বৃদ্ধিটাও আটকানো যেত। তাই যারা আবহাওয়ার খবর করছেন, অনুরোধ করছি সঠিক শব্দটা ব্যবহার করুন।
ছবি: রাজীব বসু
আরও পড়ুন
আগামী কয়েক দিন গরম আরও বাড়তে পারে, কিন্তু গরম পড়াও দরকার