Home খবর রাজ্য আতঙ্কে দৌড়, কাদায় হোঁচট, শেষমেশ গ্রেফতার— বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার রুদ্ধশ্বাস...

আতঙ্কে দৌড়, কাদায় হোঁচট, শেষমেশ গ্রেফতার— বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার রুদ্ধশ্বাস সকাল

TMC MLA Jiban Krishna Saha Arrest

সকালটা ছিল একেবারে সাধারণ। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই মুর্শিদাবাদের কান্দির আন্দি গ্রাম সাক্ষী হল এক নাটকীয় দৃশ্যের। সোমবার সকাল পৌনে আটটা। হঠাৎই গ্রাম ঘিরে ফেলে ইডির গাড়ি ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। লক্ষ্য একটাই— বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।

প্রথমে ডাকাডাকি শুরু হয় বাড়ির সামনে। ভেতরে তখন চরম অস্বস্তি। গুঞ্জন, শুরুতে নাকি জীবনবাবু ভেবেছিলেন, কোনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গুন্ডাবাহিনী হানা দিয়েছে তাঁর বাড়িতে। তাই প্রাণভয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এক লাফে টপকে যান পাঁচিল, শুরু হয় দৌড়— রুদ্ধশ্বাস ছোটাছুটি!

গ্রামের সরু রাস্তা ধরে প্রায় ১০০ মিটার ছুটেছিলেন তিনি। পিছু পিছু ইডির আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাস্তার দুই ধারে তখন গ্রামবাসীর ভিড়— সকালের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ ফেলে সবাই দাঁড়িয়ে ‘তামাশা’ দেখছে। কিন্তু বেশি ক্ষণ টিকল না সেই ছুটোছুটি। কাদায় হোঁচট খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলেন বিধায়ক। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে কাদামাখা শরীর, ভেজা পোশাক, চোখেমুখে আতঙ্ক। আর তারপরেই দু’হাত চেপে ধরল ইডি আধিকারিকরা।

“মারবেন না, আমাকে মারবেন না”— পড়ে গিয়ে কাতর স্বরে অনুরোধ করেছিলেন জীবনবাবু। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে দুই হাত তুলে ধীরে ধীরে বাড়ি পর্যন্ত হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।

 মোবাইল, নর্দমা আর রহস্য

এমন পরিস্থিতিতে যেন আগের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল। বছর দুয়েক আগে সিবিআই অভিযানে দুটি মোবাইল অবলীলায় পুকুরে ছুড়ে ফেলেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। এবারও চেষ্টা! কেউ বলছেন, তিনি নর্দমায় ছুড়ে দেন মোবাইল। আবার কারও মতে, হোঁচট খাওয়ার সময় পকেট থেকে নিজেই ছিটকে পড়ে যায় ফোন। ভাগ্যিস নর্দমা শুকনো ছিল, তাই কয়েক মিনিটেই উদ্ধার করে ফেলে ইডি। তবে বাজেয়াপ্ত হওয়া দু’টি ফোনের পাসওয়ার্ড জানাতে অস্বীকার করেছেন বিধায়ক।

ম্যারাথন জেরা ও তল্লাশি অভিযান

ফোনের কল রেকর্ডিং ধরে জেরা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও লেনদেনের খোঁজখবর— চার ঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদে জীবনকৃষ্ণ উত্তর দেন বেছে বেছে। অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যান। অসঙ্গতি ধরা পড়ে একাধিক জবাবে।

সমান্তরালে ইডি তল্লাশি চালায় বিধায়কের গাড়িচালক রাজেশ ঘোষের বাড়িতে। জিজ্ঞাসাবাদ চলে তাকেও। অন্যদিকে, বড়ঞা বিধায়কের আত্মীয়রাও বাদ যাননি। সোমবার সকালেই হানা পড়ে বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার কাউন্সিলর তথা জীবনকৃষ্ণের পিসি মায়া সাহার বাড়িতে। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডির আরেকটি দল।

অবশেষে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে গ্রেফতার ঘোষণা। কলকাতায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে। প্রথমে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তারপর ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করে হেফাজতের আবেদন জানাবে ইডি।

 এর আগেও অবশ্য আইনের জালে ধরা পড়েছেন জীবনকৃষ্ণ। সিবিআইয়ের মামলায় কাটিয়েছেন ১৩ মাস জেল। কিন্তু এ বার কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির হানায় আরও বড় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।

গ্রামবাসীরা যেন রূপকথার মতোই দেখলেন তাঁদের বিধায়কের সকালবেলার সেই দৌড়ঝাঁপ— আতঙ্কে পালানো, কাদায় হোঁচট, আর শেষমেশ গ্রেফতার হয়ে ফিরে আসা।

এই খবরটিও পড়তে পারেন: কেন বিপিন গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় নিক্কির? তদন্তে উঠে এল আসল কারণ

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version