ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া ঘোষণা করার পর মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজকুমার আগরওয়ালের দফতরে অনুষ্ঠিত হল সর্বদল বৈঠক। বিকেল ৪টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা চলাকালীন এনুমারেশন ফর্ম, আধার কার্ডের ভূমিকা, এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মতো বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সভা। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলীয় প্রতিনিধিরা একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই প্রেক্ষিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগেই এই এসআইআর প্রক্রিয়া। তবে বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করেছে—প্রক্রিয়াটিকে ঘিরে সন্দেহ ও অসন্তোষ উভয়ই প্রবল।
তৃণমূলের অবস্থান
রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, “এসআইআর প্রক্রিয়ায় আতঙ্ক তৈরি করে মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর দায় কমিশনের।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “২০০২ সালে দুই বছর ধরে এসআইআর সম্পন্ন হয়েছিল, এখন কেন মাত্র আড়াই মাসে শেষ করতে চায় কমিশন? কাদের খুশি করতে এমন তাড়াহুড়ো?”
মন্ত্রী আরও বলেন, “কমিশনের কর্তারা আগে নিজের জন্মসনদ দিন, তারপর নাগরিকদের জিজ্ঞেস করুন।” তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়া আসলে সিএএ-এনআরসি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি। মেয়র ফিরহাদ হাকিম যোগ করেন, “একজন বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলেই তৃণমূল প্রতিবাদে নামবে।”
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
বৈঠকে বিজেপির প্রতিনিধি শিশির বাজোরিয়া বলেন, “তৃণমূলের অবস্থান বদলে গিয়েছে। আগে বলেছিল, এসআইআর বাতিল করতে ৫ লক্ষ মানুষ নিয়ে দিল্লি যাবে, এখন বলছে নির্ভুল ভোটার তালিকার কথা।” তিনি অভিযোগ করেন, “ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। আত্মহত্যার দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।”
বামের প্রশ্ন
বামফ্রন্টের সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সিইও অনেক প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারেননি। ২০০২ সালের তালিকা কেন ধরা হল? নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ১২টি নথির মধ্যে ১১টি কেমন করে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে?” তিনি তীব্র প্রশ্ন তোলেন, “নাগরিকত্ব ঠিক করার অধিকার নির্বাচন কমিশনকে কে দিয়েছে?”
সিইওর প্রতিক্রিয়া
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মনোজকুমার আগরওয়াল জানান, “আমি এখানে পোস্ট অফিসের ভূমিকায়। রাজনৈতিক দলগুলির মতামত লিখিত আকারে নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিশনে পাঠাব।” তিনি আরও জানান, “আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিএলও-দের ট্রেনিং চলবে। রাজ্যের ৭.৬৬ কোটি ভোটারের প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই করা হবে। প্রত্যেকের জন্য তৈরি হবে কিউআর কোড।”
এই বৈঠক শেষে যেমন ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে আশার বার্তা শোনা গেল, তেমনই রাজনৈতিক দলের মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনার আঁচও আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
আরও পড়ুন: SIR ঘোষণা হতেই ফের এনআরসি আতঙ্ক! আগরপাড়ায় আত্মঘাতী প্রৌঢ়, মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র প্রতিক্রিয়া
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us