Home রাজ্য হুগলি মাহেশের রথযাত্রা বঙ্গের প্রাচীনতম, জেনে নিন তার সূচনা-কাহিনি

মাহেশের রথযাত্রা বঙ্গের প্রাচীনতম, জেনে নিন তার সূচনা-কাহিনি

0

খবর অনলাইন ডেস্ক: রথযাত্রা এলেই আগে মনে পড়ে যায় পুরীর কথা। কিন্তু এই বঙ্গেও পুরীর মতো ঐতিহ্যশালী রথযাত্রা হয়। তা হল মাহেশের রথ। হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের কাছেই মাহেশ। এই মাহেশের রথযাত্রাই হল বঙ্গের প্রাচীনতম রথযাত্রা।

কী করে শুরু হল এই রথযাত্রা, তার একটি কাহিনি আছে। চতুর্দশ শতকে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বাঙালি সাধু পুরীতে তীর্থ করতে যান। জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়ানোর ইচ্ছা হয় তাঁর। কিন্তু মন্দিরের পাণ্ডাদের আপত্তিতে তা করতে পারলেন না। তখন জগন্নাথদেবের সাধনায় বসলেন। তিন দিন পরে দেখা দিলেন জগন্নাথদেব। ধ্রুবানন্দকে বঙ্গদেশে ফিরে যেতে বললেন। তিনি বললেন, বঙ্গদেশে ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ গ্রামে তিনি একটি বিরাট দারুব্রহ্ম (নিমগাছের কাণ্ড) পাঠিয়ে দেবেন। সেই নিমকাঠে বলরাম, সুভদ্রা আর তাঁর মূর্তি গড়ে পূজা করতে হবে। তিনি ধ্রুবানন্দের হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব। স্বপ্নাদেশ পেয়ে ধ্রুবানন্দ মাহেশে এলেন। শুরু করলেন সাধনা। অবশেষে একদিন মাহেশের ঘাটে নিমকাঠ ভেসে এল। তিনি সেই নিমকাঠে তিন দেবতার মূর্তি গড়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন।

সন্ন্যাস গ্রহণের পরে শ্রীচৈতন্য তীর্থ পর্যটনে বেরোন। পুরীর যাওয়ার পথে তিনি মাহেশে পৌঁছোন। ধ্রুবানন্দের মন্দির দর্শন করতে করতে তিনি গভীর সমাধিতে মগ্ন হন। শ্রীচৈতন্য মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ বলেছিলেন। ধ্রুবানন্দ তখন বৃদ্ধ হয়েছেন, অশক্ত। তিনি শ্রীচৈতন্যকে মন্দিরের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন। শ্রীচৈতন্য তাঁর বারোজন গোপালের অন্যতম কমলাকর পিপলাইকে মন্দিরের ভার দেন। কিছু দিন পর ধ্রুবানন্দ প্রয়াত হন। কমলাকর নবদ্বীপে ন্যায়শাস্ত্র পড়তে এসে মহাপ্রভুর সান্নিধ্যে আসেন এবং কালক্রমে তিনি তাঁর প্রিয় শিষ্য হয়ে ওঠেন। মাহেশের জগন্নাথের ভার গ্রহণ করে তিনি সেখানেই থেকে যান। মাহেশের রথ উৎসব তিনিই শুরু করেছিলেন। তাঁর উত্তরাধিকারীরাই মাহেশের সেবাইত বা অধিকারী হিসাবে পরিচিত হন।

মাহেশের মন্দিরগাত্রে লেখা আছে – ‘শ্রীপাদ মাহেশের শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের প্রথম সেবাইত, দ্বাপর যুগের ব্রজধাম-এর পঞ্চম গোপাল এবং শ্রীমৎ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ শ্রীল শ্রী কমলাকর পিপলাই চক্রবর্তী’।

কমলাকর পিপলাইয়ের জন্ম ১৪১৪ শকাব্দে তথা ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে। তিনি মাহেশে জগন্নাথদেবের সেবায় নিযুক্ত হন ১৪৫৫ শকাব্দে তথা ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে। মাহেশের জগন্নাথের ভার পেয়ে কমলাকর পিপলাই রথ উৎসব শুরু করেছিলেন। এই হিসেবে বলা যায়, মাহেশের রথযাত্রার বয়স প্রায় ৫০০ বছর। দেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা এবং বঙ্গের প্রথম রথযাত্রা।  

মাহেশের রথ আগে ছিল কাঠের, এখন লোহার। বহুবার এই রথের সংস্কার হয়েছে, পুনর্নির্মাণ হয়েছে। এখন ৫০ ফুট উচ্চতার ১২ চাকা বিশিষ্ট যে লোহার রথটি চলে তা মার্টিন বার্ন কোম্পানির তৈরি। এই রথটি ১৮৮৫ সালে নির্মাণ করান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান শ্যামবাজারের বসু পরিবারের কৃষ্ণচন্দ্র বসু। এই একটি রথেই থাকেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। তাঁরা মাহেশের জগন্নাথ মন্দির থেকে অল্প দূরের মাসির বাড়িতে যান। এই হল মাহেশের রথযাত্রা।

আরও পড়ুন

রথযাত্রা উপলক্ষ্যে হাওড়া-নবদ্বীপ রুটে স্পেশাল ট্রেন, বাতিল থাকবে চারটি লোকাল

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version