জলপাইগুড়ি জেলার নাগাইসুরি চা-বাগানে বোনাসের দাবিতে এক অভূতপূর্ব আন্দোলন গড়ে তুললেন শ্রমিকরা। প্রায় ৩৪ ঘণ্টা টানা বিক্ষোভের পর শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলন সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে মালিকপক্ষের আশ্বাসে।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
৬ সেপ্টেম্বর থেকে চা-বাগানে বোনাস বকেয়া নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন শ্রমিকরা। প্রতিদিন ২–৩ ঘণ্টার গেট মিটিং থেকে ধীরে ধীরে আন্দোলন রূপ নেয় ঘেরাও এবং অনশন কর্মসূচিতে। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতভর ম্যানেজারের অফিসে ঘেরাওয়ের পরও কোম্পানির পক্ষ থেকে একাধিক কিস্তিতে বোনাস দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
শ্রমিকদের দাবি বনাম মালিকপক্ষ
শ্রমিকদের দাবি, ২০% বোনাস এক কিস্তিতেই প্রদান করতে হবে।
কিন্তু মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছিল ১২% + ৪% + ৪% কিস্তির, যা আইনসিদ্ধ নয়। অবশেষে মারিকো সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল ১০% বোনাস দেওয়া হবে, বাকি অর্থ নিয়ে পরে আলোচনা হবে।
পুলিশের লাঠিচার্জ
২৬ সেপ্টেম্বর থেকে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা খোলা আকাশের নিচে বসে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জও করে, তবে শ্রমিকরা পিছিয়ে আসেননি। অবশেষে মালিকের সরাসরি আশ্বাসের পর ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার পর আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
বৃহত্তর সংকট
পশ্চিমবঙ্গ চা মজুর সমিতির (PBCMS) অভিযোগ, নাগাইসুরি-সহ মারিকো-সম্মেলন গ্রুপের অধীন ১২–১৩টি চা-বাগানের মধ্যে অন্তত ৯টিতে শ্রমিকরা মাসের পর মাস মজুরি পাচ্ছেন না। ২–৩ বছর ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ড কেটে নেওয়া হলেও জমা করা হয়নি ইপিএফও-তে। এই আচরণকে শ্রমিক নেতারা “চরম প্রতারণা ও অপরাধ” বলে অভিহিত করেছেন।
শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এবারও যদি পূর্ণাঙ্গ ২০% বোনাস না দেওয়া হয়, তবে তাঁরা আবারও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। তাঁদের বক্তব্য, “বোনাস ভিক্ষে নয়, আইনি অধিকার। অধিকার আদায়ে আবারও লড়াইয়ে নামব।”