কলকাতা: হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের সেই নির্দেশকে স্বাগত জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রামনবমীর বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই আঁটসাঁট নিরাপত্তার সঙ্গেই চলছে হনুমান জয়ন্তীর প্রস্তুতি।
হাওড়ার শিবপুরের পর রামনবমীর মিছলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল হুগলির রিষড়ায়। আদালতের দ্বারস্থ হন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার সেই মামলাতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার সময়, ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, রাজ্য পুলিশ যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয় তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়া উচিত।
হাইকোর্টের নির্দেশ
হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতা, হুগলি ও ব্যারাকপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তিনটি কোম্পানি মোতায়েন করা হবে। হনুমান জয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে বেঞ্চ বলেছে, অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। রোগের ব্যাপারে আগাম প্রতিরোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারপতি বলেন, হনুমান জয়ন্তীতে যেন কোনো হিংসা না হয়, এর জন্য মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য রুট মার্চ করতে হবে। মুম্বইয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গণেশ চতুর্থীর সময় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলের আয়োজন করে। এতে বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা কমে যায়।
শান্তির বাণী মুখ্যমন্ত্রীর
আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আদালতের অর্ডারকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করি এটা সবাই মেনে চলবে”। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আগামীকাল হনুমান দেবের পুজো আছে। সবাই শান্তিতে সবকিছু পালন করুন। শান্তিতে পালন করলে কোনো অসুবিধা হয় না। বাংলা শান্তির জায়গা। বাংলায় সব ধর্ম, সব উৎসব, সবাইকে আমরা সম্মান করি। আমি এখনও বলি ধর্ম যাঁর যাঁর নিজের আর উৎসব কিন্তু সবার। সবার উৎসবে আমরা যেন শান্তিতে মিলিত হতে পারি। গোটা পৃথিবীতে শান্তি থাক, দেশে শান্তি থাক, বাংলায় শান্তি থাক।”
সজাগ দৃষ্টি নবান্নের
বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে হনুমান জয়ন্তী পালন করবে বেশ কিছু সংগঠন। শহর এবং শহরতলিতে বেশ কিছু জায়গায় বেরোবে ধর্মীয় শোভাযাত্রাও। রামনবমীর ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই দিন অশান্তি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। জানা গিয়েছে, আপাতত স্থির হয়েছে, হাওড়া এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে ৩ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়ন করা হবে।
লালবাজারের উদ্যোগ
বুধবার একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা নিয়ে একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে লালবাজারও। বৃহস্পতিবার যে কোনো মিটিং-মিছিলের জন্য উদ্যোক্তাদের আগাম অনুমতি নিতে হবে পুলিশের। কলকাতা পুলিশের অনলাইন পোর্টালে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করলে এবং ওই ফর্মে উল্লিখিত যাবতীয় শর্ত রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিলে তবেই সব দিক খতিয়ে দেখে অনুমতি দেওয়া হবে। অস্ত্র বা লাঠি হাতে শোভাযাত্রায় বেরোনো যাবে না। ব্যবহার করা যাবে না ডিজে কিংবা সাউন্ড সিস্টেমও। লালবাজার সূত্রে খবর, আগামীকাল সবকটি শোভাযাত্রায় এসি পদমর্যাদার অফিসাররা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশের পিকেটও থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৫০টি লোকেশনে অতিরিক্ত সিসিটিভি লাগানো হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফে। প্রয়োজনে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানে হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়মি বিক্ষোভের জেরে বাতিল একাধিক ট্রেন, চূড়ান্ত দুর্ভোগে যাত্রীরা