চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে বিশেষ সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই ৩১ মে-র মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি চাকরিহারাদের জন্য বয়সের সীমায় ছাড় দেওয়া হবে, যাতে সকলেই পরীক্ষায় বসতে পারেন।
মমতা বলেন, ‘‘যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁদের জন্য বয়সে ছাড় দেওয়া হবে। কোর্টকে জানানো হবে যে, বিজ্ঞপ্তি জারির আগে সংবাদমাধ্যম মারফত সকলকে জানানো হয়েছে। রিভিউ পিটিশন কড়া ভাবে লড়া হবে। যোগ্যতা থাকলে সবাই আবেদন করতে পারবেন।’’
চাকরি বাতিল হওয়ার পরে বহু প্রাক্তন শিক্ষকই এখন বয়সসীমা পার করে ফেলেছেন। তাঁদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিতেই বয়সে ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মমতা আরও জানান, ‘‘পরীক্ষায় বসুন, স্কুলে যান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত মাইনে পাবেন। নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন।’’
তিনি বলেন, রিভিউ পিটিশনের প্রক্রিয়া এখনও আদালতে বিচারাধীন। তবে কোর্টের গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে তা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই নির্দেশ অনুযায়ী, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে। রিভিউ পিটিশনে ইতিবাচক রায় এলে তা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, যাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে বা পরীক্ষা দিতে বাধা রয়েছে, তাঁদের জন্য শিক্ষা বিভাগে কিংবা অন্যান্য বিভাগে নিয়োগের সুযোগ থাকবে। অতিরিক্ত গ্রুপ সি ও ডি পদ তৈরি হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এই মুহূর্তে শিক্ষক পদে মোট শূন্যপদ রয়েছে ২৪,২০৩টি। এর সঙ্গে নবম-দশমের জন্য ১১,৫১৭ এবং একাদশ-দ্বাদশের জন্য ৬,৯১২ অতিরিক্ত পদ তৈরি হচ্ছে। গ্রুপ সি-র ২,৯৮৯ এবং গ্রুপ ডি-র ৫,৪৮৮ শূন্যপদও রয়েছে।
তিনি জানান, ১৫ নভেম্বর প্যানেল প্রকাশিত হবে এবং ২০ নভেম্বর থেকে কাউন্সেলিং শুরু হবে। অনলাইন আবেদন করা যাবে ১৬ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত।
সোমবার শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন চাকরিহারাদের প্রতিনিধি দল। তাঁরা পরীক্ষার পরিবর্তে যোগ্যদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি তুলেছিলেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষা ছাড়া সেই সুযোগ থাকছে না বলেই ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রীর কথায়।
সব মিলিয়ে, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। তবে রাজ্যের তরফে আদালতের নির্দেশ মেনে একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার ঘোষণার পর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, “বিজ্ঞপ্তি জারি করলে লড়াই কোথায় থাকবে? আবার দুর্নীতির পথে হাঁটতেই কি এই পরিকল্পনা? যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কীভাবে চাকরি রক্ষা করবেন মুখ্যমন্ত্রী? এটা সমাজকে জড়িয়ে আরও বড় দুর্নীতির ছক।”