কলকাতা: বঙ্গ-রাজনীতির মঞ্চে অনুব্রত মণ্ডল এক অতিপরিচিত নাম। এক সময় তাঁর কথায় ‘বাঘে-গরুতে একঘাটে জল’ খেত বলেও শোনা যায়। কিন্তু তিহাড় জেল থেকে ফেরার পর তাঁর রাজনৈতিক গতিবিধি তুলনামূলক ভাবে ‘নিষ্প্রভ’ ঠেকছে। তাঁর উপস্থিতিতে বীরভূমের রাজনৈতিক সমীকরণ যতটা আলোড়িত হচ্ছে, পুরোটাই স্ব-দলীয়। চোখা চোখা বাক্যবাণে বিরোধীদের কাত করার তাঁর সেই স্বভাবসিদ্ধ ঢং এখন অধরা বললেই হয়।
নতুন করে বলার নয়, তিহাড় থেকে ফিরে আসার পর অনুব্রত মণ্ডল ফের সক্রিয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান পাকা করার চেষ্টা করবেন। এই ক-দিন আগেও ইলামবাজারে একটি অঞ্চলভিত্তিক জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘১২টা বুথের মানুষকে বলব, আগে যা লিড দিয়েছেন, ২৬-এ আরও ভোট দিতে হবে।’’ তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি দলের জন্য আগের মতোই জনসমর্থন ধরে রাখতে চান। দলনেত্রীর আস্থা অটুট রাখতে চান। কিন্তু অনুব্রত বনাম কাজল শেখের গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত মাঝেমধ্যেই ‘কেষ্ট’কে পিছনে টেনে ধরছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
একটি মহলের মতে, অনুব্রতর ফেরা বীরভূমের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে কিছুটা নড়িয়ে দিয়েছে। কাজল শেখ ও অনুব্রত মণ্ডলের গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে, যা মাঝে মাঝে হিংসার রূপ নিচ্ছে। এমনকি বীরভূম থেকে বোমাবাজির অভিযোগও উঠে আসছে। এ ধরনের ঘটনাকে ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই নানা চর্চা শুরু হয়েছে বীরভূম তৃণমূলের অন্দরে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে ধীরে ধীরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছেন কাজল। এই পরিস্থিতি দলীয় নেতৃত্বের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
এরই মধ্যে, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মেগা বৈঠকে অনুব্রতকে কার্যত সতর্ক করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বীরভূমের জন্য আলাদা করে কিছু বললাম না। ওদের এখানে কোর কমিটি আছে। কেষ্ট কাউকে কিন্তু বাদ দেওয়া যাবে না। কাজলকেও কনফিডেন্সে নিতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি অনুব্রতকে একক আধিপত্য বিস্তার করতে না দিয়ে, দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে চাইছেন।
একইসঙ্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূতুড়ে বা ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, বীরভূমের কোনো নেতাকে সেই কমিটিতে রাখা হয়নি। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘‘বীরভূমকে রাখিনি কারণ সেখানে কোর কমিটি আছে।’’ এটি দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি কৌশলী পদক্ষেপ বলে মনে করা হলেও ঘটনা পরম্পরায় জমি হারানো অনুব্রতর ‘রাশ’ টেনে রাখার আভাসও হতে পারে।
২০২৬-এ বিধানসভা ভোট। সাংগঠনিক শক্তি অটুট রাখতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দলের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভোটব্যবস্থা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস যে নতুন কৌশল নিচ্ছে, তা আগামী দিনে বীরভূমের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। এরই মধ্যে আলাদা করে মমতার সতর্কবার্তা এবং নতুন কোর কমিটির ভূমিকার জেরে অনুব্রতর ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ কতটা মসৃণ হবে, তা সময়ই বলবে!