Home খবর রাজ্য প্রশিক্ষণ চলাকালীনই কাজে যোগ দেবেন নতুন পুলিশকর্মীরা, রাজ্য সরকারের নয়া নীতির ঘোষণা...

প্রশিক্ষণ চলাকালীনই কাজে যোগ দেবেন নতুন পুলিশকর্মীরা, রাজ্য সরকারের নয়া নীতির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশের নতুন নিয়োগ নীতির আওতায়, এবার থেকে প্রশিক্ষণ চলাকালীনই কাজে যোগ দিতে পারবেন পুলিশকর্মীরা। ১২ হাজার নতুন পুলিশ নিয়োগের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি, এই নতুন সিদ্ধান্তকে ভবিষ্যতের পথনির্দেশক বলেই উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, পুলিশ বিভাগের ম্যানপাওয়ার বাড়ানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের রাজ্যে পুলিশ কর্মীদের ঘাটতি রয়েছে, ফলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যেভাবে চিকিৎসকরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দেন, তেমনই আমাদের পুলিশ কর্মীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের জন্য সময় ব্যয় না করে প্রশিক্ষণের সময়েই তাদের কাজে যোগদান করানো হবে।”

নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন নিয়োগের জন্য পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াকে সংক্ষিপ্ত করা হবে এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে প্রশিক্ষণকালীন পুলিশকর্মীদের ব্যবহার করার এই নতুন নীতি রাজ্যের সুরক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “পুলিশে নিয়োগ করতে একটু সময় লাগে। কিন্তু আমরা সেই সময়ও হাতে নেই না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।” এর পরেই তিনি যোগ করেন, “এই নিয়োগগুলি হয়ে গেলে আমরা রাজ্যের প্রতিটি কোণে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।”

আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সম্প্রতি ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনায় এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর থেকে রাজ্যের হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আরজি কর ঘটনার পর থেকে আমরা সুরক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা একশো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলির জন্য। রাজ্য জুড়ে সমস্ত সরকারি হাসপাতালগুলিতে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে যথাসম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের পক্ষ থেকে সুরক্ষা সংক্রান্ত ঘোষণা

আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কপিল সিব্বল জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আগামী সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সুরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

নিরাপত্তা অডিট এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সুরক্ষা অডিটের কাজ শুরু করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বিশেষত হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণরত পুলিশ কর্মীদের কাজে ব্যবহার করার উদ্যোগ রাজ্যের সুরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী এবং কার্যকর বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “আমাদের ম্যানপাওয়ার সমস্ত জায়গায় প্রয়োজন। সেই জন্যই প্রশিক্ষণকে সংক্ষিপ্ত করে কাজের মধ্যে নিয়ে আসতে হচ্ছে।”

এই সিদ্ধান্তের ফলে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুরক্ষা ব্যবস্থায় দ্রুত পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে পুলিশ বিভাগের এই নীতিগত পরিবর্তন এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version