Home রাজ্য উঃ ২৪ পরগনা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আগাছার জঙ্গল, অবহেলায় জীর্ণ হচ্ছে সোদপুরে গান্ধীজির ‘দ্বিতীয় বাড়ি’

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আগাছার জঙ্গল, অবহেলায় জীর্ণ হচ্ছে সোদপুরে গান্ধীজির ‘দ্বিতীয় বাড়ি’

0
সোদপুর গান্ধী আশ্রমের হাল।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: সোদপুর স্টেশন থেকে বেরিয়ে বিটি রোডের দিকে হাঁটলে ৪৫০ মিটার। বিটি রোডের মোড় থেকে সোদপুর স্টেশনের দিকে গেলে ৭০০ মিটার। স্টেশনের দিক থেকে এলে যেখানে উড়ালপুল শেষ হচ্ছে, তার বাঁ দিকেই রয়েছে সরকারি আবাসন। তার ভেতরেই রয়েছে প্রায় বিস্মৃত গান্ধী আশ্রম তথা খাদি প্রতিষ্ঠান।

এই বাড়িকে বলা হয় গান্ধীজির ‘সেকেন্ড হোম’। ফলকে লেখাও রয়েছে সে কথা। গান্ধীজির বিখ্যাত কর্মভূমি সবরমতীর পরই সোদপুরের স্থান। ভারতীয় ইতিহাসের অনেক অধ্যায় জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির সঙ্গে। এখানেই নেতাজি বৈঠকে বসেছিলেন গান্ধীজি ও নেহরুর সঙ্গে।

এক সময়ে এখানে ছিল সুন্দর চর্চিত বাগান, এখন সেখানে অবহেলার ঝোপঝাড়। ভেঙে পড়ছে বাড়িটা। আগাছায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে গান্ধীজির আবক্ষ মূর্তি-সহ স্মৃতিফলকটিও। এখন সেখানে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। এই গান্ধী আশ্রমেই ছিল খাদি প্রতিষ্ঠান। খাদির সামগ্রী তৈরির কাজ হত। বহুকাল হল সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আসবাবপত্র পড়ে রয়েছে ভাঙাচোরা অবস্থায়। পড়ে রয়েছে বহু পুরোনো তাঁত, চরকা-সহ বিভিন্ন মূল্যবান ছবি, নথি।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সহযোগী সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর স্নেহভাজন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের বেঙ্গল কেমিক্যালসের চাকরি ছেড়ে সতীশচন্দ্র ১৯২১ সালে এই আশ্রম তৈরি করেন। এই আশ্রমের উদ্বোধনে মহাত্মা গান্ধী তো এসেই ছিলেন, এসেছিলেন মতিলাল নেহরু-সহ কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের তৎকালীন বহু নেতা। এখানে চরকায় সুতো কাটা শুরু হয়। চলতে থাকে খাদিবস্ত্র, মধু, ধুপকাঠি ইত্যাদি তৈরির কাজ।

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত বেশ কয়েক বার সোদপুরের এই আশ্রমে এসেছিলেন গান্ধীজি। ১৯৩৯ সালের মার্চে গান্ধীজি ও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে এই আশ্রমেই বৈঠকে বসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিন দিন ধরে বৈঠকের পরে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ছেড়ে ফরোয়ার্ড দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর দিন নোয়াখালিতে দাঙ্গা শুরু হয়। তখন সোদপুরের আশ্রম থেকেই নোয়াখালির উদ্দেশে রওনা দেন জাতির পিতা। গান্ধীজি তাঁর নিজের লেখাতেই সোদপুরের আশ্রমকে তাঁর ‘দ্বিতীয় গৃহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

পৌনে তিন বিঘা জমির উপরে তৈরি গান্ধী আশ্রম বড়ো অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এককালের সাজানো বাগান এখন ঝোপঝাড়ে ভরা। ছাদের টালি বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। আশ্রমের সব ঘরই তালাবন্ধ। নেতাজি-নেহরু-সহ বিভিন্ন নেতার ছবি লাগানো রয়েছে গান্ধী আশ্রমের নোনা ধরা দেওয়ালে। দরজা জানলাও প্রায় ভেঙে পড়ার জোগাড়। চতুর্দিকে আগাছা।

প্রবীণ গান্ধীবাদী অসিতরঞ্জন দাস ১৯৭৪ সাল থেকে এই আশ্রমের সচিবের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এই আশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে অসিতবাবু বছরখানেক আগে সংবাদমাধ্যমের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, “এই বাড়িটাকে ঠিকঠাক করার কোনো সদিচ্ছা কেন্দ্রের নেই।”

একবার আশ্রমের হাল ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছিল অমদাবাদের ‘সবরমতী আশ্রম প্রিজার্ভেশন অ্যান্ড মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।’ কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার সোদপুরের গান্ধী আশ্রম সংরক্ষণের প্রকল্পটি বাতিল করেছে।

আজ ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। আজই জাতির জনকের বন্দনায় মেতে উঠেছে গোটা দেশ। অমদাবাদের সবরমতী আশ্রম, রাজকোটের গান্ধী মিউজিয়াম, কৌশানির অনাশক্তি আশ্রমে গান্ধী বন্দনায় মেতে উঠবেন মানুষজন। কিন্তু সোদপুরের গান্ধী আশ্রম কি বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে?

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version