আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক তরুণী চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যু নিয়ে তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, এই ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বশীলতা ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
মামলার প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করতে চাওয়া নিয়েও তীব্র সমালোচনা হয়। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের তরফে তেমন কোনও প্রচেষ্টার কথা অস্বীকার করা হয়। পরে যখন নানা তথ্য বেরিয়ে আসে, তখন জানা যায়, ওই চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে রাজ্য সরকারের ভূমিকায়। প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা নিয়েও।
বিভিন্ন সময় নানা ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলীয় ভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। এই ঘটনায় পরও তিনি দলীয় ভাবেই দোষীদের কঠিন শাস্তি চেয়ে পথে নামেন। তবে এ বার প্রশাসনিক গাফিলতির জন্যে নিজের সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার তাঁর সিদ্ধান্ত, যা রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার পর পরই প্রতিবাদ আন্দোলনে বসেন আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়ার ডাক্তাররা। তাঁদের আন্দোলন চলাকালীন ১৪ ডিসেম্বর রাতে হাসপাতালের ভিতরে সংগঠিত হামলা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা যখন সহকর্মীর জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন, তখন কিছু দুষ্কৃতী হামলা চালায় এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণও নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে এই হামলার ঘটনায় জড়িত হিসাবে গ্রেফতার করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ থেকে উঠে এসেছে আরও কিছু প্রশ্ন, যার উত্তর এখনও মেলেনি। নিহত চিকিৎসকের পরিবার কেন এত দেরিতে তাঁর মৃতদেহ দেখতে পেলেন? কেন তাঁদের মৃতদেহ দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করা হয়েছিল? কেন অপরাধস্থলকে ঘিরে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে? এছাড়াও, যে ওয়ার্ডে অপরাধটি সংগঠিত হয়েছিল, সেখানে হঠাৎ করে কেন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে অনেকেই বড়সড় ষড়যন্ত্রের একমাত্র পুতুল হিসেবে দেখছেন। পরিবারের দাবিও তেমনই। রাজ্যের ভেতরে ‘মেডিসিন মাফিয়া’র সক্রিয়তা নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, যাদের চাপে পুরো ঘটনাটি নিয়ন্ত্রিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তের গতি নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
দেশ জুড়ে এই মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নজর রেখেছে জনগণ। রাজনৈতিক মহলের মতে, ১৪ বছরের শাসনকালে তৃণমূল সরকার একটি বড় পরীক্ষার মুখে। তাদের প্রশ্ন, এই পরীক্ষায় আদৌ কী পাশ করতে পারবে তারা?
এই নিয়ে আলোচনা ভিডিয়োটি ওয়ান ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া