ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যুতে রাজ্য সরকারের পক্ষে বড় স্বস্তি। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাই কোর্টের একটি বিতর্কিত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে, যেখানে রাজ্য সরকারের ২০১০ সালের পর ইস্যু করা সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করা হয়েছিল। এর ফলে রাজ্যে উচ্চশিক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওবিসি প্রার্থীদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
রাজ্যের পক্ষে শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ের ফলে রাজ্যের ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত থমকে গিয়েছে। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ জানায়, “এই রায় অত্যন্ত বিস্ময়কর। কীভাবে হাই কোর্ট এমন স্থগিতাদেশ দিতে পারে? সংরক্ষণ এক্সিকিউটিভের ক্ষমতা। এটা ‘ইন্দিরা সাহনি মামলার’ পর থেকেই নির্ধারিত।”
রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্সে লিখেছেন, “ওবিসি নীতির পক্ষে এটা নৈতিক জয়। আমরা উচ্চশিক্ষা দফতরে এই পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে অমলচন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন, অভিযোগ করে বলেন, ২০১১ সাল থেকে তৃণমূল সরকার ভুয়ো ওবিসি শংসাপত্র ইস্যু করেছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের ২০১০ সালের পর ইস্যু করা সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয়। যদিও ২০১০ সালের আগে সংরক্ষণের সুবিধা পেত এমন ৬৬টি উপজাতিকে এই নির্দেশের বাইরে রাখা হয়।
এর জেরে রাজ্য সরকার ২০২৪ সালের ৮ জুন নতুন করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যেখানে ৭৬টি জাতিকে ওবিসি তালিকাভুক্ত করা হয়। ‘আত্মদীপ’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে ১২ জুন হাই কোর্টে যায়। এর পর ১৭ জুন ফের হাই কোর্ট রাজ্য সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের পক্ষ জানানো হয়, নতুন তালিকাটি রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি।
এই রায়ের ফলে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সামিনেশন বোর্ড (WBJEE) ফলপ্রকাশের জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও, মামলা চলায় তা স্থগিত রাখে। বোর্ডের চেয়ারপার্সন সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশ পেলেই তারা ফল প্রকাশ করবে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের ফলে রাজ্যের ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের শুরু হতে চলেছে। যা রাজ্যের হাজার হাজার ওবিসি প্রার্থীর কাছে স্বস্তির খবর।