বহরমপুর: শোরগোল ফেলে দেওয়া বহরমপুরে ছাত্রী খুনের ঘটনায় প্রাক্তন প্রেমিককে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত। বহরমপুর গার্লস কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে প্রকাশ্যে খুনের মামলায় বৃহস্পতিবার ফের বহরমপুর আদালতে তোলা হয় সুশান্ত চৌধুরীকে। এ দিন তাঁকে ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক।
মালদহের ইংরেজবাজারের বাসিন্দা সুতপা ছিলেন বহরমপুর গার্লস কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। থাকতেন গোরাবাজার এলাকার মেসে। গত ২০২২ সালের ২ রাতে মেসে ফেরার পথে প্রাক্তন প্রেমিকের হাতে খুন হয়ে যান তিনি। ঘটনায় প্রকাশ, বহরমপুরের সুইমিং ক্লাবের গলিতে প্রাকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল সুতপাকে। মেসের দরজার সামনেই সুতপার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন সুশান্ত। ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপান সুতপাকে। হাতে থাকা নকল পিস্তল উঁচিয়ে আশপাশে ভিড় জমাতে থাকা স্থানীয়দের দিকে তেড়ে যান সুশান্ত। চোখের সামনে খুন হতে দেখেও আগ্নেয়াস্ত্রের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেননি। সুশান্তর হাতের খেলনা পিস্তলটিকে আসল ভেবেই ভয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ।
পুলিশি তৎপরতায় জেলা জুড়ে নাকা চেকিংয়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। পরের দিনই সমশেরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হন সুশান্ত। তার পর উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এমন নৃশংস ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনার বীভৎসতা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে।
গ্রেফতারির পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুশান্ত দাবি করে, সেই সুতপাকে হত্যা করে। তাঁর বক্তব্য ছিল, “মেয়ের মা বাবা আমাকে মানসিক হেনস্থা করছিল। তাই খুন করেছি। আদালত যে শাস্তি দেবে তা মাথা পেতে নেব।”
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মালদহের বাসিন্দা বছর তেইশের সুশান্ত গৌড় কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর বিহারের পটনায় কম্পিউটার নিয়ে স্নাতকোত্তরে ভরতি হয়েছিলেন। তবে সুতপা কখন কোথায় যাচ্ছে, সে সবের উপর নজরদারি চালাতেন। কী ভাবে তিনি এই সমস্ত খবরাখবর পেতেন, কবে বহরমপুরে এসেছিলেন, খুনের দিন ঠিক কী ঘটেছিল, সে সব তথ্য উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ১৫ মাস পরে গত মঙ্গলবার সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এই মামলায় ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন সুশান্ত। বুধবার সাজা নিয়ে চলে সওয়াল-জবাব পর্ব। বৃহস্পতিবার ফের বহরমপুর আদালতে তোলা হয় সুশান্তকে। এ দিনও দোষী সুশান্ত চৌধুরী ক্ষমা চেয়ে নেন বিচারকের কাছে। জানান, বহু কষ্ট করে সে পড়াশোনা করেছেন, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। এ দিন তাঁকে ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত।
আরও পড়ুন: পা দিয়ে আলু চটকাচ্ছেন ক্যান্টিন কর্মী! বিশ্ববিদ্যালয়ের রান্নাঘর থেকে ইন্টারনেটে ভাইরাল ভিডিও