খবর অনলাইন ডেস্ক: রবিবার মধ্যরাতে সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। তার প্রভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। ঘূর্ণিঝড়-বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন কলকাতায়, আর-এক জন মৌসুনি দ্বীপে।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ভেঙে পড়েছে বহু গাছ। উড়ে গিয়েছে ঘরের চাল। হেলে পড়েছে সিগন্যাল পোস্ট। ছিঁড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের তার। নেট পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে। উড়ে গিয়েছে মেট্রোর শেড। রাজ্যে রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। কলকাতা থেকে বিমান চলাচলও ২১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। সোমবার সকালেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চলছে জোর বৃষ্টি। সঙ্গে রয়েছে হাওয়ার দাপটও।
কলকাতায় একজন-সহ মৃত্যু দু’জনের
কলকাতার এন্টালি এলাকায় শেখ সাজিদ (৫১) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঝড়ের জেরে ঘরের চাল উড়ে এসে তাঁর ওপরে পড়ে। ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনি দ্বীপে ঘরের চালের উপরে গাছ পড়ে মারা যান ৮০ বছরের বৃদ্ধা রেণুকা মণ্ডল।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে প্রচুর গাছ শিকড় উপড়ে পড়েছে কলকাতা এবং সংলগ্ন বিধাননগর ও রাজারহাট এলাকায়। এর জেরে আহত হয়েছেন ৩ জন। কলকাতার সাদার্ন অ্যাভেনিউ, লেক প্লেস, চেতলা, ডি এল খান রোড, ডাফরিন রোড, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, নিউ আলিপুর, বেহালা, যাদবপুর, গোল পার্ক, হাতিবাগান, জগৎ মুখার্জি পার্ক, কলেজ স্ট্রিট প্রভৃতি এলাকা থেকে গাছ পড়ে যাওয়ার খবর এসেছে। যত দূর খবর পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে জানা যায় কলকাতায় ৬৮টি এবং বিধাননগর-রাজারহাটে ৭৫টি গাছ ভেঙে পড়েছে।
শুধুমাত্র কলকাতা শহরের নিচু এলাকাগুলিতেই নয়, জল জমেছে পার্ক স্ট্রিটের মতো অভিজাত এলাকাতেও।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে ট্রেন চলাচল। ছবি: রাজীব বসু
ট্রেন, বিমান, মেট্রো চলাচলে বিঘ্ন
রেলপথের উপর গাছ উপড়ে পড়ায় বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। গাছগুলি তুলে নিয়ে রেলপথ পরীক্ষার পর ট্রেন চালু করা হবে। এতে সময় লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে রেলের তরফে। ‘রেমাল’-এর তাণ্ডবে পুরোপুরি বন্ধ শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল। আপ ও ডাউন কোনো লাইনেই ট্রেন চলছে না। আর অন্য শাখায় ট্রেন চলাচল খুবই অনিয়মিত।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় দক্ষিণ পূর্ব রেল। শালিমার স্টেশনের ইয়ার্ডে থাকা দূরপাল্লার ট্রেন যাতে গড়িয়ে না যায় তার জন্য ট্রেনের চাকাকে রেললাইনের সঙ্গে চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ব্যাহত হয়েছে কলকাতা থেকে বিমান পরিষেবাও। রবিবার দুপুর থেকে উড়ান বন্ধ রাখা হয়। ২১ ঘণ্টা বিমান পরিষেবা বন্ধ থাকায় ৩৪০টি অন্তর্দেশীয় ও ৫৪টি আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে।
কলকাতায় মেট্রো পরিষেবাও বিপর্যস্ত হয়েছে। বেশ কিছু মেট্রো স্টেশনে জল জমেছে। আর ঝড়ের তাণ্ডবে কিছু মেট্রো স্টেশন ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে টালিগঞ্জ- নিউ গড়িয়া (মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে কবি সুভাষ) ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে। বাকি অংশে অর্থাৎ মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত খেপে খেপে মেট্রো চলছে। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো, জোকা-মাঝেরহাট ও কবি সুভাষ-রুবি লাইনে মেট্রো চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রয়োজনে যোগাযোগ
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহজনিত সমস্যার সমাধানে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তথা ডব্লিউবিএসইডিসিএল (WBSEDCL) কন্ট্রোলরুম খুলেছে। কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ – ৮৯০০৭৯৩৫০৩-০৪। আর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হেল্পলাইন নম্বর – ১৯১২১।
আরও পড়ল
২ জুন আত্মসমর্পণ করতে চান না অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ফের দ্বারস্থ সুপ্রিম কোর্টের