শ্রয়ণ সেন
তাপপ্রবাহের কবলে দক্ষিণবঙ্গ। এই অঞ্চলের ১৫টি জেলার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী অঞ্চল বাদ দিয়ে সর্বত্র সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি।
তবে একটা বিষয়ে লক্ষ করে দেখা যাবে যে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা কলকাতার তুলনায় অনেকটা বেশি থাকলেও সেখানে কিন্তু অসহ্য গরমের অনুভূতি তুলনামূলক ভাবে কম। সন্ধ্যা হলেই ফুরফুরে হাওয়া, মনোরম পরিবেশ। অথচ কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চলে গরমের অনুভূতি অনেক বেশি। সন্ধ্যা হলেও স্বস্তির কোনো চিহ্ন নেই, বিশেষত শহরের একদম কেন্দ্রবিন্দুতে।
আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি কলকাতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। এটা কলকাতার গরমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাপমাত্রা এই মুহূর্তে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু গরমের অনুভূতি আগের থেকে অনেকটাই বেশি হচ্ছে। কেন?
এটার একটা কারণ গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা (Heat Adaptability) আমাদের কমে যাওয়া। তবে সব থেকে বড়ো কারণ হল ‘শহুরে তাপ দ্বীপ।’ ইংরেজিতে যাকে বলে Urban Heat Island।
এটা বোঝা খুব সহজ। দিনের বেলায় রোদের তেজের কারণে শহুরে মাটি যে ভাবে তপ্ত হয়ে ওঠে, সেই তাপটা সন্ধ্যা হলেও আটকে যাচ্ছে শহরের বায়ুমণ্ডলেই। বেরিয়ে যেতে পারে না। একে বলে Heat Trapping।
এটার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বড়ো বড়ো ইমারত, জনসংখ্যার ঘনত্ব, যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ, বাতানকুল যন্ত্র থেকে নির্গত তাপ। এর পাশাপাশি অবাধে গাছপালা কাটা, ফাঁকা জায়গার অভাব এবং জলাশয় ভরাটের মতো ব্যাপার তো আছেই। এ সবের কারণে শহরের তাপটা আটকে যাচ্ছে। ফলে এখানে তাপ দ্বীপ তৈরি হয়ে যায়।
তীব্র গরমের দিন একই সময়ে যদি শহর থেকে সামান্য দূরে কোনো ফাঁকা জায়গায় যান, দেখবেন সেখানে অনেক বেশি স্বস্তি, কিন্তু শহরে তীব্র অস্বস্তি।
সবার অসচেতনতার মাশুল দিচ্ছি আমরা। তাই আগামী দিনে শহরের ক্ষেত্রে গরমের অনুভূতি আরও বাড়বে বই কমবে না।
আরও পড়ুন
গরম নিয়ে আতঙ্ক ছড়াবেন না, আতঙ্কিত হবেন না