শ্রয়ণ সেন
বর্ষার দামামা বেজে গিয়েছে। দক্ষিণ আন্দামান সাগরে ১৯ মে, রবিবার বর্ষা প্রবেশ করে যাবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী এর ১২ দিন পর, অর্থাৎ ৩১ মে বর্ষা প্রবেশ করার কথা কেরলে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের (১ জুন) একদিন আগেই এবার ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে যেতে পারে বর্ষা।
এই মুহূর্তে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় অবশ্য তীব্র গরম। উত্তর এবং উত্তরপশ্চিম ভারত তো গরমে ঝলসে যাচ্ছে। সেখানে পারদ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও তাপমাত্রা বেড়েছে। এপ্রিলের মতো অতটা অসহনীয় পরিস্থিতি না হলেও পারদ এখানেও আটত্রিশ ডিগ্রি থেকে চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাচ্ছে। এতে অনেকেই আবার হাহাকার করতে শুরু করেছেন।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে গরমকালে গরম পড়বেই। এর থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। আর সত্যি কথা কী জানেন, এই গরমটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কেন গুরুত্বপূর্ণ? খুব সহজ ভাষায় বুঝতে হলে বলা যায় যে বর্ষাকে আহ্বান করার জন্য গরমটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে প্রত্যেকটা ঋতুর আলাদা আলাদা গুরুত্ব আছে। গরমকালে গরম পড়াটাও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়। মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষাকে ভারতের ভূখণ্ডে ডেকে আনার জন্য গরমটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তরপশ্চিম ভারত এবং পাকিস্তানে গরমের দাপট যত বাড়বে ততই বাড়বে নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। টানা যদি তাপপ্রবাহ চলতে থাকে, তাপমাত্রা যদি পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে, তা হলে নিম্নচাপ তৈরি হবে।
মাটি যত গরম হবে তত বেশি তাপ উৎপন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে যাবে। তৈরি হবে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল। এর থেকে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে তখন শূন্যস্থান তৈরি হবে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সমুদ্র থেকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসবে মৌসুমি বায়ু।
তীব্র গরম যে বৃষ্টির পথকে প্রশস্ত করে, সেটা তো কয়েক দিন আগেই দেখে নিলাম। ১৫ দিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ঠিক একই পদ্ধতিতে স্থানীয় ভাবে নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হল পশ্চিমবঙ্গে। পরিস্থিতি ঝড়বৃষ্টির অনুকূল হয়ে উঠল। তার পরের সপ্তাহখানেক গরমের হাত থেকে রেহাই, স্বস্তিদায়ক আবহাওয়া।
এ বারও কিন্তু ব্যতিক্রমী কিছু হবে না। সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া ফের ঝড়বৃষ্টির জন্য অনুকূল হয়ে উঠবে। এমনিতে এখনও রোজই দক্ষিণবঙ্গের কোথাও না কোথাও ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার থেকে আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই ঝড়বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়বে।
তাই বলছি, এই গরমটাকে একটু সহ্য করুন। এর সঙ্গে এপ্রিলের সেই বিরল গরমের চরিত্র একদমই আলাদা। চলতি গরমটা কিন্তু আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। প্রতি বছরই এমন গরম পড়ে। প্রত্যেকটা ঋতুর আলাদা গুণ আছে আমাদের দেশ তথা গোটা উপমহাদেশে। এটাই আমাদের এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।