মহাকাশ বরাবরই কৌতূহল জাগায়, বিশেষ করে শিশুদের মনে। আর সেই কৌতূহল আরও বেড়ে গেল যখন লখনউয়ের সিটি মন্টেসরি স্কুলে উপস্থিত বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেলেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ অবস্থানরত ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লর সঙ্গে।
ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে ISS-এ পৌঁছেছেন শুক্ল। তিনি বর্তমানে Axiom Mission 4-এ অংশগ্রহণ করছেন। ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন—মহাকাশে ঘুম কেমন? কী খাওয়া হয়? কেউ অসুস্থ হলে কী হয়? শরীর কীভাবে অভিযোজিত হয় মহাকাশে এবং কীভাবে পৃথিবীতে ফিরে সেই অভিযোজন ঘটে?
উত্তরে শুক্ল জানালেন, “মহাকাশে মেঝে বা ছাদ বলে কিছু নেই। কেউ দেওয়ালে ঘুমায়, কেউ আবার ছাদে! ঘুমের পরে যাতে কোথাও ভেসে না যাই, তাই আমাদের ঘুমানোর ব্যাগ বেঁধে রাখতে হয়।”
খাবার নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, বেশিরভাগ খাবারই প্রি-প্যাকেজড। তবে বিভিন্ন পছন্দের খাবারও নেওয়া যায়। তিনি নিজে গাজরের হালুয়া, মুগ ডালের হালুয়া ও আমরাস নিয়ে গিয়েছেন মহাকাশে।
মহাকাশে শরীর ফিট রাখতে কী করেন? এর উত্তরে শুক্ল বলেন, “মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি। সাইকেল চালাই, যদিও সাইকেলে সিট নেই! নিজেকে বেল্টে বেঁধে ব্যায়াম করতে হয়।”
ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র থাকে। মানসিক চাপও থাকে, তবে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভিডিও কলের সুযোগ থাকায় অনেকটা হালকা লাগে। অবসর সময়ে খেলাধুলো কিংবা পৃথিবীকে বাইরের জানলা দিয়ে দেখা, এগুলোই হয় সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।
এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযানের (গগনযান) অংশগ্রহণকারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন অঙ্গদ প্রতাপ। তিনি বলেন, “আগামী কয়েক দশক ভারতের মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে তোমাদের।”
এক ছাত্র জানায়, “শুধু মহাকাশ নয়, বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি উৎসাহ দিল এই অনুষ্ঠান। মহাকাশে চাকরি মানেই শুধু নভোচারী হওয়া নয়, বৈজ্ঞানিক বা পরীক্ষামূলক পাইলট হয়েও এই জগতে প্রবেশ সম্ভব।”
সব মিলিয়ে এই ‘বিধ্যার্থী সংবাদ কর্মসূচি’-তে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীরা অনুপ্রাণিত এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে প্রস্তুত। মহাকাশ যে শুধুই দূরের এক রহস্য নয়, তা বুঝিয়ে দিল শুভাংশু শুক্ল-র সরাসরি সংলাপ।