খবর অনলাইন ডেস্ক: বাঙালি রুজির টানে যেখানে যেখানে বসতি জমিয়েছে, সেখানেই পাড়ি দিয়েছে বাংলার উৎসব ও সংস্কৃতি। প্রবাসী বাঙালিদের মুখ্য বার্ষিক উদ্যাপন দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে সপ্তাহান্তে সবাই এক জায়গায় জড়ো হওয়া, খাওয়া-দাওয়া, ধুতি-শাড়ি, অঞ্জলি, প্রসাদ, আড্ডা, গানবাজনা… বাংলার বাইরে একটুকরো বাংলার স্বাদ পাওয়ার চেষ্টা।
বহু বছর ধরেই এই সময়টায় কলকাতা ও মুম্বইয়ের বিশিষ্ট শিল্পীরা প্রবাসের পুজোয় অনুষ্ঠান করতে যান। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, অন্যবারের তুলনায় এ বছর বাংলা থেকে অনেক বেশি সংগীতশিল্পী উত্তর আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন। ফসিল্স, ক্যাকটাস, লক্ষ্মীছাড়া, শিলাজিৎ, লোপা-জয়, রূপঙ্কর, অন্তরা, রথীজিৎ, জয়তী, সোমলতা, লগ্নজিতা, পৌষালি, গৌরব এবং রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা একঝাঁক নতুন শিল্পী। এরই সঙ্গে জি-বাংলা সারেগামাপা-র ফোকগুরু দেব চৌধুরী, বাংলা লোকসংগীতের অনন্য সমৃদ্ধ ভাণ্ডার নিয়ে এই প্রথমবার পুজোয় পাড়ি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলার শেষ দরবেশ শ্রী কালাচাঁদ দরবেশের শিষ্য দেব চৌধুরী শুধুই একজন লোকগায়ক নন, তিনি গত ২৫ বছর ধরে লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা নিয়ে নিবিষ্ট গবেষণা করছেন। গত সাত বছর ধরে বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো জি-বাংলা সারেগামাপা-র লোকসংগীতের মেন্টর ও গ্রুমার তিনি। তাঁর শিক্ষকতাতেই পর পর দু’বছর লোকসংগীত থেকে চ্যাম্পিয়ন হন অর্কদীপ মিশ্র ও পদ্মপলাশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কীর্তনীয়া পদ্মপলাশ হালদারকে গ্রামীণ কীর্তনের আসর থেকে বাংলা টেলিভিশনের মুলস্রোতে এই দেবই তুলে নিয়ে আসেন।
জি-বাংলা সারেগামাপা-র পরিচালক অভিজিৎ সেনের সঙ্গে দেব।
লোকসংগীতের প্রচার ও প্রসারই প্রচারবিমুখ এই মানুষটির একমাত্র লক্ষ্য। দেবেরই তৈরি করা ‘সহজিয়া ফাউন্ডেশন’ ২০০৯ থেকে বাংলার প্রবীণ লোকশিল্পীদের জন্য নীরবে কাজ করে চলেছে। কলকাতায় তৈরি করেছেন ‘সহজ সুরের পাঠশালা’, যেখানে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলার শিকড়ের রঙ-রূপ-রস-গন্ধ ও মাধুর্য্যমাখা লোকসংগীতের বিভিন্ন ধারা।
নিজে খ্যাতির আলো থেকে দূরে থাকলেও, আমেরিকা-কানাডা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেব নিয়মিত যাতায়াত করেন। কখনও গান গাইতে, কখনও বা বাংলার লোকসংগীত নিয়ে বিদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোয় ক্লাস নিতে বা ওয়ার্কশপ করাতে। এ বছর কানাডার টরন্টোতে NABC 2025 বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল বাংলার লোকসংগীত ও লোকনৃত্য। দেব চৌধুরীর কনসেপ্ট, স্ক্রিপ্ট ও সার্বিক পরিচালনায়, কানাডার প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে মনোজ্ঞ সুন্দর এক অভিনব অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছিলেন। সহযোগী শিল্পী ছিল তাঁরই ছাত্র অর্কদীপ, অনন্যা এবং নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন কোহিনূর সেন বরাট।
জি-বাংলা সারেগামাপা-র সঞ্চালক অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেব।
অনুসুয়া চক্রবর্তীর আয়োজনে দেব এ বছর পুজোয় অনুষ্ঠান করবেন আটলান্টা, নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, সিনসিনাটি ও হিউস্টনে। তার মধ্যে ওহিও-র সিনসিনাটি শহরে এবছর নতুন একটি দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়েছে যেখানে অন্য প্রবাসীদের মতো সপ্তাহান্তে পুজো হচ্ছে না, পঞ্জিকামতে সব নিয়ম-আচার-নির্ঘন্ট মেনে পাঁচ দিন ধরেই পুজা হচ্ছে। সেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ জড়ো হচ্ছেন, সারাদিন উৎসবের আনন্দ আর প্রতিদিন সন্ধ্যেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে বিজয়াদশমীর সন্ধ্যেয় বিভিন্ন বাংলা লোকগানের এক নতুন ধরনের উপস্থাপনা করবেন দেব। তার গানের তালে, ঢাকের বোলে সিঁদুর খেলা আর ধুনুচি নাচের জন্য তৈরি হচ্ছে সিনসিনাটি।
এ বারের মার্কিন সফরে তার শেষ অনুষ্ঠান টেক্সাসের হিউস্টন শহরের বিজয়া সম্মিলনীতে, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য লোকসংগীতের এক বিশেষ ফিউশনধর্মী অনুষ্ঠান, আয়োজনে ‘Prana – the essence of life’।
আমেরিকার বিভিন্ন শহর যেমন দেব চৌধুরীর অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় আছে, তেমনিই দিন গুনছেন আকাশ আট টিভি চ্যানেলের সকালের লাইভ অনুষ্ঠান ‘গুড মর্ণিং আকাশ’-এর অগণিত দর্শক, যাঁরা টিভিতে দেব চৌধুরীর উজ্জ্বল উপস্থিতিকে কিছুদিনের জন্য মিস করবেন। আমরাও তার বর্ণময় অভিজ্ঞতা শোনার অপেক্ষায় রইলাম।