Home খেলাধুলো ক্রিকেট টি২০ সিরিজ: রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভার, শেষ বলে রিঙ্কু জয় এনে দিলেন ভারতের

টি২০ সিরিজ: রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভার, শেষ বলে রিঙ্কু জয় এনে দিলেন ভারতের

0
'প্লেয়ার অভ দ্য ম্যাচ' সূর্যকুমার যাদব। ছবি বিসিসিআই ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

অস্ট্রেলিয়া: ২০৮-৩ (জোশ ইংলিস ১১০, স্টিভ স্মিথ ৫২, প্রসিধ কৃষ্ণ ১-৫০)

ভারত: ২০৯-৮ (সূর্যকুমার যাদব ৮০, ঈশান কিষান ৫৮, তনবীর সংঘ ২-৪৭)  

বিশাখাপত্তনম: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ বোধহয় একেই বলে। ম্যাচের শেষ ওভারে চূড়ান্ত উত্তেজনা। বল করছেন সন অ্যাবট। অক্ষর পটেল কিছু ‘ডট’ বল দিয়ে যখন অ্যাবটের বলে তাঁকেই ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন তখন জয়ের জন্য ভারতের দরকার ২ রান, রয়েছে ৩ বল। পর পর দুটো বলে রান আউট রবি বিশনয় আর অর্শদীপ সিং। হাতে রয়েছে ১ বল। জয়ের জন্য দরকার ১ রান। ব্যাট হাতে রিঙ্কু সিং।

মাঠে প্রচণ্ড টেনশন। ম্যাচ কি তবে সুপার ওভারে যাবে? ১ রান আটকানোর জন্য অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ফিল্ডার দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন রিঙ্কুকে। মাছি গলার উপায় নেই। শেষ বল করলেন অ্যাবট। লং অনের উপর দিয়ে রিঙ্কু বল পাঠিয়ে দিলেন সীমানার ওপারে। না, ছয় হল না। বলটা ছিল নো বল। তাই ৬ নয়, এল ১ রান। তবে কাজের কাজ হয়ে গেল। ভারতকে ২ উইকেটে জিতিয়ে দিলেন রিঙ্কু। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০ ফলে এগিয়ে থাকল। বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের কিছুটা যেন বদলা নেওয়া হল।

সেঞ্চুরি করলেন জোশ ইংলিস        

বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনমের ড. ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি এসিএ-ভিডিসিএ স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। অস্ট্রেলিয়া সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। ঝড়ের গতিতে রান তুলতে থাকে তারা। ভারতের কোনো বোলারকেই রেয়াত করেনি তারা। দলের ১০০ রান ওঠে মাত্র ১১.৩ ওভারে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া হারায় মাত্র ১ উইকেট। ১১ বলে ১৩ রান করে রবি বিশনয়ের বলে বোল্ড হয়ে যান ম্যাথু শর্ট। দলের রান তখন ৪.৪ ওভারে ৩১।

স্টিভ স্মিথের সঙ্গী হন জোশ ইংলিস। ইংলিস আসার পর রান ওঠার গতি আরও বাড়ে। রবি বিশনয়কে ছয় মেরে ইংলিস দলের ১০০ রান পূর্ণ করেন। ওই ছয়তে নিজের ৫০ রানও পূর্ণ হয়। রবির ওই ওভারেই ১৮ রান তোলেন জোশ ইংলিস। এর পর স্টিভ স্মিথ নিজের ৫০ রান পূর্ণ করেন ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে মুকেশ কুমারকে ৪ মেরে। কিন্তু পরের বলেই রান আউট হয়ে যান তিনি। স্মিথ করেন ৪২ বলে ৫১ রান।

ততক্ষণে অবশ্য ইংলিস তাঁর শতরানের কাছাকাছি এসে গিয়েছেন। পরের ওভারে চতুর্থ বলে অর্শদীপকে ৪ মেরে সেঞ্চুরি করেন ইংলিস। সেই ওভারেই অর্শদীপের বল দু’বার বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে ইংলসি পৌঁছে যান ১১০ রানে। পরের ওভারে অর্থাৎ ইনিংসের ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রসিধ কৃষ্ণের বলে যশস্বী জয়সোয়ালকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ইংলিস। ইংলিস ১১০ রান করেন মাত্র ৫০ বলে। ইংলিস যখন আউট হন দলের রান তখন ১৮০। এর পর ইনিংসের শেষ ১৬ বলে টিম ডেভিড এবং মার্কাস স্টয়নিস যোগ করেন ২৮ রান। অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে করে ৩ উইকেটে ২০৮ রান। ডেভিড ১৩ বলে ১৯ এবং স্টয়নিস ৬ বলে ৭ রান করে নট আউট থাকেন।

‘প্লেয়ার অভ দ্য ম্যাচ’ সূর্যকুমার যাদব

জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২০৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে শুরতেই উইকেট হারায় ভারত। রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হয়ে যান ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। দলের রান তখন ১১। দলের ২২ রানে ফিরে যান যশস্বী জয়সোয়াল। ৮ বলে ২১ রান করে ম্যাথু শর্টের বলে স্টিভ স্মিথকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন যশস্বী। ২ উইকেটে ২২ রান। ভারতের সমর্থকরা ধরেই নিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি ম্যাচে হারের মুখ দেখতে চলেছে ভারত।

ঈশান কিষানের সঙ্গী হন দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। বিশ্বকাপ ফাইনালে সূর্যকুমারের পারফরম্যান্স সবাই দেখেছেন। তাই তাঁর ওপর ভরসা রাখতে পারেনি ভারতের সমর্থকরা। কিন্তু এই সূর্যকুমারই অন্য রূপে অবতীর্ণ হলেন। টি২০ ক্রিকেটে ব্যাটার হিসাবে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং-এ কেন সূর্যকুমার এক নম্বরে রয়েছেন, তার প্রমাণ দিয়ে দিলেন তিনি। ঈশান কিষানকে নিয়ে সূর্যকুমার ঝড় তুললেন। তৃতীয় উইকেটে যোগ হল ১১২ রান, ১০ ওভারে। ৩৯ বলে ৫৮ রান করে তনবীর সংঘের বলে ম্যাথু শর্টকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলেন ঈশান।

সূর্যকুমারের সঙ্গী হলেন তিলক বর্মা। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে যোগ হল ২০ রান ১৩ বলে। তিলককেও তুলে নিলেন তনবীর। মার্কাস স্টয়নিসকে ক্যাচ দিয়ে তিলক ফিরে গেলেন। সূর্যকুমার এবার সঙ্গী হিসাবে পেলেন রিঙ্কু সিংকে। পঞ্চম উইকেটের জুটিতে ১৭ বলে যোগ হল ৪০ রান। দলের ১৯৪ রানের মাথায় ফিরে গেলেন আজকের নায়ক সূর্যকুমার। ৪২ বলে ৮০ রান করে জ্যাসন বেহরেনডর্ফের বলে আরন হার্ডিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন তিনি। দলকে রেখে গেলেন জয়ের দোরগোড়ায়।

জয়ের জন্য আর দরকার ১৫ রান, হাতে ১৪ বল। নামলেন অক্ষর পটেল। সবাই যখন ভাবছেন জয়ের সমীকরণ তো খুব সোজা, ঠিক তখনই শুরু হল খেলা। গোটাচারেক ডট বল খেলে পরিস্থিতি জটিল করে অক্ষর যখন প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন তখন তিনটি ফলই সম্ভব ছিল – যে কোনো দলের জয় বা ম্যাচ সুপার ওভারে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকর্তা হিসাবে অবতীর্ণ হলেন রিঙ্কু সিং। টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়ের মুখ দেখল ভারত। বিশ্বকাপের ফাইনালে এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ের পর এই জয়ে যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মিটল। ‘প্লেয়ার অভ দ্য ম্যাচ’ হলেন সূর্যকুমার যাদব।

আরও পড়ুন

‘বিশ্বকাপ ফাইনাল কলকাতা বা মুম্বইয়ে হলে ভারত জিতত’, ফের বিতর্ক উস্কে দিলেন মমতা

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে পালটে গেল ভারতের কোচিং দল, রাহুলের জায়গায় এলেন লক্ষণ

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version