আর্জেন্তিনা: ১ (লাউতারো মার্তিনেজ) কোলোম্বিয়া: ০
খবর অনলাইন ডেস্ক: স্পেনেরই পথ অনুসরণ করল আর্জেন্তিনা। ২০০৮-এ ইউরো কাপ জেতার পর ২০১০-এ বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেন। ফের ২০১২-তে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ঠিক সেভাবেই আর্জেন্তিনা ২০২১-এ কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০২২-এ বিশ্বকাপ জিতেছিল। ফের এ বছর তারা কোপা চ্যাম্পিয়ন হল।
আর আর্জেন্তিনার কোপা জয়ের সূত্র ধরে ইতিহাস রচনা করলেন লিওনেল মেসি। ২০২৪-এর কোপা জয়ের সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়রদের ফুটবলে ৪৫টি ট্রফি জিতলেন মেসি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল ব্রাজিলের দানি আলভেসের দখলে।
সোমবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ফ্লোরিডার মিয়ামিতে হার্ড রক স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পরে শুরু হয়। স্টেডিয়ামের গেটে ভক্তদের অতি উৎসাহের জেরে আমেরিকার মতো দেশে কোপার মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুরু করতে বিলম্ব ঘটে। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সময় সকাল ৭টা নাগাদ ম্যাচ শুরু হয়। ম্যাচের শুরু থেকেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্তিনাকে বেশ বেগ দিল কোলোম্বিয়া। সমানে সমানে লড়াই করল তারা। ম্যাচ নিয়ে গেল ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে। শেষকালে ম্যাচ শেষ হওয়ার ৮ মিনিট আগে লাউতারো মার্তিনেজের গোলে জিতল আর্জেন্তিনা।

পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন মেসি। ছবি CONMEBOL Copa America TM ‘X’ handle থেকে নেওয়া।
প্রথমার্ধে চাপ বেশি ছিল কোলোম্বিয়ার
প্রথমার্ধে গোল করার সুযোগ বেশি সৃষ্টি করেছিল কোলোম্বিয়া। কিন্তু আর্জেন্তিনার রক্ষণভাগ ছিল অনড়। তারা প্রতিপক্ষের সব আক্রমণ দারুণ ভাবে ঠেকিয়ে গিয়েছে। ম্যাচের ৭ মিনিটে কোলোম্বিয়ার খামেস রদরিগুয়েজ আর্জেন্তিনার বক্সে থাকা সতীর্থ ইবান করোদোবা বল পাস করেন। করোদোবার অ্যাক্রোব্যাটিক শট পোস্টের বাইরে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ১৩ মিনিটে আবার সুযোগ। কর্নার থেকে খামেশের ক্রসে হেড করেন কার্লোস কুয়েস্তা। কিন্তু আর্জেন্তিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে ভিড়ের মধ্যে সেই হেড ধরে ফেলেন।
কোলোম্বিয়ার আক্রমণের চাপ থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে আর্জেন্তিনা। কোলোম্বিয়া বক্সের মধ্যে ক্রস বাড়াতে গিয়ে সান্তিয়াগো আরিয়াসের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন লিওনেল মেসি। দেখে মনে হচ্ছিল, বেশ ব্যথা পেয়েছেন মেসি। প্রাথমিক চিকিৎসা করেন ডাক্তাররা। মেসি উঠে দাঁড়ান, আবার খেলা শুরু করেন। ৪১ মিনিটে আবার কোলোম্বিয়ার প্রচেষ্টা। রিচার্ড রিওস দূর থেকে আর্জেন্তিনার গোল লক্ষ্য করে যে শট নেন তা ধরে ফেলেন মার্তিনেজ।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠ ছাড়লেন মেসি
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে যায় আর্জেন্তিনা। কোলোম্বিয়ার বক্সে বল পেয়ে যান ম্যাক আলিস্টার। তবে রিওস দলকে বিপন্মুক্ত করেন। ৫৮ মিনিটে কোলোম্বিয়ার বক্সের বাঁদিক থেকে বল পেয়ে যান দি মারিয়া। তিনি কোলোম্বিয়ার ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে যে শট নেন তা বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার কামিলো বার্গাস।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে মাঠে বসে পড়েন আর্জেন্তিনীয় ফুটবলের প্রাণ দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি। মনে হচ্ছিল, আগের আঘাতটা আবার তাঁকে জর্জরিত করছে। দলকে গোলশূন্য অবস্থায় রেখে মাঠ ছাড়তে হল মেসিকে। চোখের জলে তিনি মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন। মেসির জায়গায় নামলেন নিকো গনজালেজ।
দুই দলের মধ্যে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ চললেও দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচের ফয়সালা হল না। ম্যাচ গড়াল ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে। এখানে উল্লেখ্য, কোপা আমেরিকার ফুটবলে একমাত্র ফাইনালে ম্যাচেই ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। বাকি সব ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলা অমীমাংসিত থাকলে শুরু হয় পেনাল্টি শুট-আউট।
গোল করার পরে সতীর্থের অভিনন্দন মার্তিনেজকে। ছবি CONMEBOL Copa America TM ‘X’ handle থেকে নেওয়া।
৮ মিনিট আগে গোল
অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটে আর্জেন্তিনা এনজো ফার্নান্দেজ এবং ম্যাক আলিস্টারকে বসিয়ে নামায় লো কেলসো এবং লাউতারো মার্তিনেজকে। ম্যাচ শেষ হতে আর মাত্র ৮ মিনিট বাকি। সবাই ভাবছে এবার বোধহয় ম্যাচ পেনাল্টি শুট-আউটে যাবে। কিন্তু ওই দুই পরিবর্ত খেলোয়াড়ের প্রচেষ্টাতেই অবশেষে গোল পেল আর্জেন্তিনা এবং সেই লাউতারো মার্তিনেজের পা থেকেই অতিরিক্ত সময়ের ১১২ মিনিটে গোল হল।
কোলোম্বিয়ার গোলের উদ্দেশে ধাবমান মার্তিনেজকে দুর্দান্ত ফ্লিক বাড়ান কেলসো। ইন্টার মিলানের ফরোয়ার্ড মার্তিনেজ মাথা ঠান্ডা রেখে আসল কাজটি সারেন। এই নিয়ে এই কোপা আমেরিকায় ৫টি গোল হল মার্তিনেজের। দুর্দান্ত লড়াই করেও হার মানতে হল কোলোম্বিয়াকে। ১-০ গোলে জিতে আর্জেন্তিনা আবার কোপা চ্যাম্পিয়ন হল।
কোচের অবদান
আর্জেন্তিনার এই সাফল্যের পিছনে আর-এক জনের অবদানের কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন দলের কোচ লিওনেল স্কালোনি। আর্জেন্তিনার ফুটবল ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ কোচ বললেও কম বলা হয়।
স্কালোনির তত্ত্বাবধানে আর্জেন্তিনা খেলেছে ৬৯টা ম্যাচ। তার মধ্যে জিতেছে ৪৮টা, ড্র করেছে ১৫টা আর হেরেছে মাত্র ৬টা ম্যাচে। জয়ের হার ৬৯.৫৭%। আর্জেন্তিনা গোল করেছে ১৪০টা, গোল খেয়েছে ৩৩টা। লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্তিনাকে এনে দিয়েছেন ১টা বিশ্বকাপ (২০২২), ২টো কোপা আমেরিকা ট্রফি (২০২১, ২০২৪) এবং ‘ফিনালিসিমা’ (গ্র্যান্ড ফাইনাল) ট্রফি (২০২২)।
আর্জেন্তিনার জয়ের আর-এক নায়ক কোচ লিওনেল স্কালোনি। ছবি আর্জেন্তিনা ন্যাশনাল ফুটবল টিমের ‘এক্স’ হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।
এবারের কোপায় কে কী পুরস্কার পেলেন
শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় – খামেস রদরিগুয়েজ (কোলোম্বিয়া, ১টি গোল এবং ৬টি গোল করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা)
গোল্ডেন বুট (সর্বাধিক গোল) – লাউতারো মার্তিনেজ (আর্জেন্তিনা)
শ্রেষ্ঠ গোলকিপার – এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (আর্জেন্তিনা)
ফেয়ার প্লে পুরস্কার – কোলোম্বিয়া
আগামী বছর ২০২৫-এ স্পেন আর আর্জেন্তিনা মুখোমুখি হবে ‘ফিনালিসিমা’য় তথা গ্র্যান্ড ফাইনালে। কনমেবল (CONMEBOL) আর উয়েফার (UEFA) চুক্তি অনুসারে ২০২২ থেকে ফের শুরু হয়েছে এই ‘ফিনালিসিমা’।
ইউরো কাপ ২০২৪: ইংল্যান্ড ২-১ গোলে পরাজিত, চারবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল স্পেন