তাজমহল বা রাজস্থানের দুর্গ নয়, এখন ভারতের পর্যটন গন্তব্যের নতুন চিত্রনাট্য লিখছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২৫ সালের ইন্ডিয়া ট্যুরিজম ডেটা কমপেন্ডিয়াম অনুযায়ী, রাজ্যে গত বছর বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩১.২ লক্ষ, যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পিছনে ফেলেছে ঐতিহ্যবাহী পর্যটন রাজ্য রাজস্থানকে, যেখানে বিদেশি পর্যটক এসেছেন ২০.৭ মিলিয়ন।
ইতিহাস নির্ভর পর্যটনের ক্ষেত্রে যেখানে তারা ৩ থেকে ৫ দিন নেন, সেখানে বৈচিত্রমূলক ভ্রমণে পর্ষটকরা ৯ খেকে ১৪ দিন সময় ব্যয় করছেন।
পর্যটনে রাজস্থানের থেকে এগিয়ে বাংলা
| সূচক | পশ্চিমবঙ্গ | রাজস্থান |
| বিদেশি পর্যটক আগমন | ৩১.২ লক্ষ | ২০.৭ লক্ষ |
| জাতীয় র্যাঙ্ক | ২য় | ৫ম |
| গড় অবস্থানকাল | ৯–১৪ দিন | ৩–৫ দিন |
| পর্যটন মডেল | সংস্কৃতি, প্রকৃতি, সীমান্ত পর্যটন | দুর্গ, প্রাসাদ, ঐতিহ্য |
| জনপ্রিয় গন্তব্য | কলকাতা, দার্জিলিং, সুন্দরবন, সীমান্ত এলাকা | জয়পুর, উদয়পুর, যোধপুর, জয়সালমের |
| বার্ষিক বৈদেশিক আয় | ₹২,৫০০–৩,০০০ কোটি | ₹২,৮০০ কোটি (আনুমানিক) |
বাংলার সাফল্যের রহস্য
রাজস্থানে ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ ও প্রাসাদের সংখ্যা বেশি (৩০০-রও বেশি এএসআই স্মৃতিস্তম্ভ), সেখানে বাংলায় আছে মাত্র ১৩৩টি। তবুও পর্যটক টানার ক্ষেত্রে এগিয়ে বাংলা। কারণ— পর্যটন এখানে পর্যটনের ভিত্তি হল বৈচিত্র্য শুধু ঐতিহ্যের নয়।
বাংলার পর্যটনের চার স্তম্ভ:
- কলকাতা – ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য, জাদুঘর, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
- দার্জিলিং – পাহাড়, চা-বাগান, ট্রেকিং, হিমালয়ের দৃশ্য
- সুন্দরবন – রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, ম্যানগ্রোভ বন
- সীমান্ত ও ধর্মীয় পর্যটন – উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের তীর্থকেন্দ্র

সংস্কৃতি আর নানা উৎসবের অভিজ্ঞতাই এখন পর্যটনের আসল চাবিকাঠি
পশ্চিমবঙ্গ এখন ‘অভিজ্ঞতা নির্ভর পর্যটন’-এর কেন্দ্রবিন্দু। দুর্গাপুজোর মতো উৎসব এখন UNESCO-র Intangible Heritage। এই উৎসব বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে। তাছাড়া সাহিত্য উৎসব, চলচ্চিত্র উৎসব, এবং গ্রামীণ পর্যটনের মতো ক্ষেত্রও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাকে আলাদা পরিচিতি দিচ্ছে।
প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনে এগিয়ে দার্জিলিং ও সুন্দরবন
দার্জিলিংয়ের চা-বাগান ও ইকো-লজ পর্যটকদের আকর্ষণ করছে, যেখানে ভ্রমণকারীরা স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও নদীভ্রমণ এখন আন্তর্জাতিক ইকো-ট্যুরিজম মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

কলকাতা: সংস্কৃতি, খাদ্য ও উৎসবের শহর
কলকাতা এখন শুধুমাত্র ঐতিহ্যের শহর নয়, বরং এক কসমোপলিটন সংস্কৃতির কেন্দ্র। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, কলেজ স্ট্রিট, প্রিন্সেপ ঘাট, বেলুড় মঠ ও দাক্ষিণেশ্বর—প্রতিটি স্থান বিদেশি পর্যটকদের কাছে ঐতিহ্যের সঙ্গে জীবন্ত সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা দেয়।
পাবলিক ট্যুরিজম সূত্রের সঙ্গে যৌথভাবে গ্র্যাবঅন (GrabOn)-এর সংকলিত ও বিশ্লেষিত তথ্য অনুযায়ী,
পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি পর্যটক আগমনের সংখ্যা (FTVs) ছিল ২৭,০৬,৯৪২,
যার ফলে বিদেশি পর্যটক আগমনের নিরিখে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে (এ পর্যন্ত) পশ্চিমবঙ্গে মোট পর্যটক আগমন (দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে) হয়েছে প্রায় ১৮.৪ কোটি, যা ২০২২-২৩ সালের ৮ কোটি পর্যটক আগমনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্য এসেছে তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও বাস্তব অভিজ্ঞতায় মিশেলে। রাজস্থানের রাজকীয় ঐতিহ্য অটুট থাকলেও, আধুনিক পর্যটক এখন খুঁজছেন মনের খোরাক, আর সেই খোরক তাদের দিচ্ছে বাংলা।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

