ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির ৩৭ বছর পর অবশেষে ৩৩৭ মেট্রিক টন বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ শুরু হয়েছে। বুধবার রাতে ১২টি বিশেষভাবে তৈরি লিক-প্রুফ এবং অগ্নি-প্রতিরোধী কন্টেইনারে বর্জ্য পরিবহন শুরু হয়। ভোপাল থেকে পিথামপুরে এই বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি ২৫০ কিমি দীর্ঘ ‘গ্রিন করিডর’-এর মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিবহনের সময় অ্যাম্বুলেন্স, দমকল বাহিনী এবং ৫০ জন পুলিশকর্মী সহকারে ১২টি কন্টেইনারকে নিরাপদে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। ভোপালের পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, পরিবহনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মান বজায় রাখা হচ্ছে।
বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা
পরিবহন শুরুর আগে ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের এলাকা সিল করে দেওয়া হয়।
প্রায় ২০০ শ্রমিক ৩০ মিনিটের স্বল্প শিফটে কাজ করেছেন, কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে। তারা পিপিই কিট ব্যবহার করে কাজ সম্পন্ন করেছেন।
পরিবহন চলাকালীন রাস্তার ধারে বায়ু মান পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে।
পিথামপুরে প্রতিবাদ
পিথামপুরে স্থানীয় বাসিন্দা এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ নিয়ে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ১০টিরও বেশি সংগঠন এই বিষয়ে কাল বনধের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, এই বিষাক্ত বর্জ্য বিদেশে পাঠিয়ে নষ্ট করা হোক।
ইন্দোরের মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের প্রাক্তনী সমিতির চিকিৎসকরা উচ্চ আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন, যেখানে অপর্যাপ্ত পরীক্ষা ছাড়া বর্জ্য নষ্টর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বর্জ্যের নষ্ট পদ্ধতি
পিথামপুরের অত্যাধুনিক ইনসিনারেশন প্ল্যান্টে এই বর্জ্য নষ্ট করা হবে। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের (CPCB) নির্দেশিকায় এটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে ২৫ ফুট উঁচু একটি কাঠের প্ল্যাটফর্মে বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানো হবে।
বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পরিবেশগত প্রভাব এড়াতে কঠোর প্রোটোকল মেনে চলা হবে। প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাপমাত্রা, মরশুম এবং নষ্টের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ
- ফ্যাক্টরি ক্যাম্পাসের তিনটি স্থানে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
- যেখানে বর্জ্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল, সেখানকার ধূলিকণা এবং মাটি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
কী হয়েছিল
১৯৮৪ সালে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি ৫,০০০-এরও বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। সেই সময় মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস নির্গত হওয়ার পর যে বর্জ্য পড়ে ছিল, তা দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা ছিল।
২০১৫ সালে এই বর্জ্যের একটি অংশ পরীক্ষামূলকভাবে পিথামপুরে নষ্ট করা হয়। সেই পরীক্ষার সাফল্যের পর উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় যে, ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারির মধ্যে বাকি বর্জ্য নষ্ট করতে হবে।