অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়লেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ‘সামাজিক উন্নয়ন: নারী, শিশু ও প্রান্তিক অংশের উন্নয়ন’ বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় হঠাৎই একদল বিক্ষোভকারী স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাঁদের হাতে ছিল ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’ বিরোধী পোস্টার।
বিক্ষোভকারীদের দেখে মমতা শান্ত স্বভাবেই বলেন, “আমি আপনাদের সকলকে খুব ভালোবাসি। আপনারা আপনাদের পার্টিকে আরও মজবুত করুন, যাতে আমার সঙ্গে তাঁরা লড়তে পারে!” তিনি তাঁদের মনে করিয়ে দেন যে, তিনি ভারতের প্রতিনিধি হিসেবেই বিলেতে এসেছেন, অক্সফোর্ডে বক্তৃতা করছেন। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাকে অপমান করুন, কিন্তু দেশকে অপমান করবেন না।”
তবে বিক্ষোভকারীদের বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়নি। উপস্থিত দর্শকদের পাল্টা প্রতিবাদের মুখে তাঁদের হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। মমতা রসিকতা করে বলেন, “ওঁরা আমায় মিস করলেন।” এরপর জনপ্রিয় ইংরেজি গান ‘ইফ ইউ মিস দ্য ট্রেন অ্যাম অন, ইউ উইল নো দ্যাট আই অ্যাম গন! ইউ ক্যান হিয়ার দ্য হুইসল ব্লো আ হানড্রেড মাইলস’ গেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি।
প্রতিবাদ এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া
প্রথমদিকে, সভাকক্ষের পিছন থেকে বিক্ষোভ শুরু হলেও তাতে বাধা দেন প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে। তিনি বলেন, “এটি কোনও সাংবাদিক সম্মেলন নয় যে আপনারা প্রশ্ন করবেন।” শিল্পপতি সিকে ধানুকাও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তবে মমতা নিজেই সকলকে শান্ত হতে বলেন, “গণতন্ত্রে বিরুদ্ধ-স্বর থাকবেই।”
বিক্ষোভে আরজি কর প্রসঙ্গও ওঠে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ তুললে মমতা বলেন, “ইউ আর মাই সুইট ব্রাদার। আই লভ ইউ অল।” তিনি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি আপনাদের মিষ্টি দেব। আপনাদের মতাদর্শকেও চকোলেট খাওয়াব।” এরপর আরও বলেন, “আমি বছরে দুবার করে অক্সফোর্ডে আসব। যতবার বলবেন, ততবার আসব। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।”
বিক্ষোভের নেপথ্যে কারা?
অনেকেই মনে করছেন, বিক্ষোভকারীরা এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা ভণ্ডুল করতে। কেউ কেউ তাঁদের বিজেপি সমর্থক মনে করছেন, কারণ তাঁদের পোস্টারে ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’ নিয়ে প্রতিবাদ ছিল। আবার, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ মমতাকে যাদবপুরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, যা দেখে মনে করা হচ্ছে অতিবাম মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠীও থাকতে পারে। তবে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর ব্রিটেন শাখা স্বীকার করেছে যে, তাদের সদস্যরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাঁরা গোলমাল করেছিলেন, তাঁরা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বা গবেষক নন, তাঁরা বহিরাগত। কর্তৃপক্ষ মমতার কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছে।
বক্তৃতা চালিয়ে যান মমতা
বিক্ষোভের পরও মমতা তাঁর বক্তৃতা চালিয়ে যান। কেলগ কলেজের প্রেসিডেন্ট জোনাথন মিকি ও গবেষক লর্ড কর্ণ বিলিমোরিয়ার উপস্থিতিতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। বিলিমোরিয়া তাঁকে প্রশ্ন করেন, “আপনি এত উদ্যম পান কোথা থেকে?” জবাবে মমতা বলেন, “মা-মাটি-মানুষই আমার প্রেরণা। আর আমার পদবি ব্যানার্জি, তাই এত এনার্জি।”
এই উত্তরে সভাকক্ষ হাসিতে ফেটে পড়ে। এমনকি যখন তাঁকে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি রসিকতা করে বলেন, “এগুলো ওঁদের (বিক্ষোভকারীদের) একটু দিয়ে দিন।”
যদিও বিক্ষোভকারীরা সভাকক্ষ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তবে মমতার সংযত আচরণে অনেকেই মনে করছেন, তিনি পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন। বক্তৃতা শেষে মমতাকে ঘিরে প্রবাসী বাঙালিদের উচ্ছ্বাসও দেখা যায়। লন্ডনে ফেরার সময় তাঁর বাস ঘিরে বহু মানুষ ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।