বিধানসভা ভোট এখন বহু দূরের গান। তারিখ ঘোষণা হয়নি, নির্ঘন্ট তৈরির সময় আসেনি। তবুও বৃহস্পতিবারই কার্যত শুরু হয়ে গেল ২০২৬ সালের নির্বাচনের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি সংঘাত। প্রথমে আলিপুরদুয়ারের মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মোদী। পরে সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে পাল্টা জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, যা ছিল একেবারে ‘নির্বাচনী ঝাঁঝে’ ভরা।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “দেশের হয়ে কেউ বিদেশে গিয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন, আর আপনি বাংলায় দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছেন! এখন কি রাজনীতি করার সময়?” একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, “কালকেই ভোট করে দেখান, আমি প্রস্তুত।”
বিদেশনীতি, বেকারত্ব, দুর্নীতি থেকে শুরু করে সিঁদুরের প্রসঙ্গ—প্রায় ৩৯ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনে একে একে মোদীর সমস্ত অভিযোগের জবাব দেন মমতা। সেনা অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন রাখা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এটা রাজনৈতিক ক্যাচলাইন! আপনি তো সকলের স্বামী নন, আগে নিজে সিঁদুর দিন।” যদিও সঙ্গে সঙ্গেই মন্তব্যটি ‘অনুচিত’ বলেও সরিয়ে নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ ‘সঙ্কট’-এর অভিযোগের প্রতিটি পয়েন্টে পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
- হিংসার দায় বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেন মমতা, বলেন, “মুর্শিদাবাদ-মালদহে অশান্তির নেপথ্যে ওরা। সব প্রমাণ আছে।”
- মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বলেন, “বাংলাই একমাত্র রাজ্য, যেখানে মা-বোনেরা সবচেয়ে সুরক্ষিত।”
- বেকারত্বে বলেন, “আমরা ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছি, আপনারা তা বাড়িয়েছেন।”
- দুর্নীতির প্রসঙ্গে তুলে ধরেন বিজেপিশাসিত রাজ্যের ব্যাপম কেলেঙ্কারি।
- গরিবের অধিকার প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলায় এত প্রকল্প চলছে, এত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন, অন্য কোথাও এত সুবিধা নেই।”
এছাড়া, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা পাওনার প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ ছুঁড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, বলেছেন, “আগে দেন, তারপর কথা বলুন।” পাশাপাশি, নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতির কারণও তুলে ধরেন তিনি, বলেন, “আমার মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মুখ দেখাতে যাব কেন?”
এমনকী আইপিএল ফাইনালও বিজেপির ষড়যন্ত্রের ফল বলেই দাবি মমতার। বলেন, “সব খেলা মোদী স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। আমি খেলার খবরও রাখি।”
সবমিলিয়ে বৃহস্পতিবারের দিনটি যে মমতা ও মোদীর নির্বাচনী সমরযাত্রার সূচনাক্ষণ হয়ে থাকল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে রাখলেন তৃণমূলনেত্রী নিজেই।