ভারত সফরে এসে নারী সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পুরুষ সাংবাদিকদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করায় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তীব্র সমালোচনার মুখে রবিবার তিনি ফের দিল্লিতে একটি নতুন সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন—এইবার নারী সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়, “অন্তর্ভুক্তিমূলক” বলে বর্ণনা করে।
গত ১০ অক্টোবর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেস কনফারেন্সে কোনও নারী সাংবাদিককে ডাকা হয়নি। সেই বৈঠকের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সাংবাদিক মহল, বিরোধী দল ও নারী অধিকার সংগঠনগুলি তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়। Editors Guild of India ও Indian Women’s Press Corps (IWPC) এক যৌথ বিবৃতিতে ঘটনাটিকে “মহিলাদের প্রতি চরম বৈষম্যপূর্ণ আচরণ” বলে নিন্দা করে।
তীব্র সমালোচনার মুখে মুত্তাকি রবিবারের প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “ওই ঘটনার পিছনে কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, এটি কেবল একটি টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল। সময়ের অভাবে খুব অল্প কয়েকজন সাংবাদিককে ডাকা হয়েছিল। কোনওভাবেই কারও অধিকার — পুরুষ বা নারী — খর্ব করার উদ্দেশ্য ছিল না।”
ভারতের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক
মুত্তাকি ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথমবারের মতো দিল্লি সফরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ভারতে পৌঁছন এবং শুক্রবার বৈঠক করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। আলোচনায় উঠে আসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, মানবিক সহায়তা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু।
🎥 #Watch | #Afghan FM #AmirKhanMuttaqi Press Conference 🇦🇫🇮🇳 12 अक्टूबर को Delhi में Afghan Embassy से दिए गए बयान में चर्चा हुई —
— News & Features Network | World & Local News (@newsnetmzn) October 12, 2025
India–Afghanistan रिश्ते 🤝
Trade & connectivity 🌐#Pakistan के साथ हालात ⚡
…और कई अन्य मुद्दे।
⏱ लगभग 45 मिनट की प्रेस कॉन्फ्रेंस।#Afghanistan… pic.twitter.com/oliHdIAlAL
দুরত্ব বজায় রাখল কেন্দ্র
বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার পর ভারত সরকার স্পষ্ট জানায়, আফগান বিদেশমন্ত্রীর ওই প্রথম প্রেস কনফারেন্সের সঙ্গে মন্ত্রকের কোনও সম্পর্ক ছিল না। সরকারি সূত্রের বক্তব্য— “দিল্লিতে আয়োজিত ওই সাংবাদিক বৈঠক সম্পূর্ণরূপে আফগান প্রতিনিধিদলের নিজস্ব উদ্যোগে হয়েছিল।”
বিরোধীদের তোপ
বিরোধীরা এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স (X)-এ লেখেন, “নারী সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে প্রেস কনফারেন্স করতে দেওয়া মানে প্রধানমন্ত্রী নারীদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে অক্ষম।”
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেন, “যদি আপনার নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা সত্যিই আন্তরিক হয়, তবে কীভাবে এমন বৈষম্যকে আপনি ভারতীয় মাটিতে ঘটতে দিলেন?”
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র একে “লজ্জাজনক” বলে মন্তব্য করেন, “তালিবান মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে ভারতের প্রতিটি নারীকে অপমান করা হয়েছে।”
কংগ্রেস নেতা জয়ারাম রমেশ লেখেন, “(তালি)বান অন উইমেন জার্নালিস্টস ইন ইন্ডিয়া! আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের আগের দিন এমন ঘটনা সত্যিই অগ্রহণযোগ্য।”
তালিবানের নারী সংক্রান্ত নীতির প্রেক্ষাপট
২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই আফগানিস্তানে তালিবান সরকার নারী স্বাধীনতা ও শিক্ষার অধিকারের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়াশোনা, অধিকাংশ চাকরি ও জনসমাগমস্থলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ সম্প্রতি সতর্ক করেছে, আফগানিস্তানে নারীদের উপর “পদ্ধতিগত ও ব্যাপক নির্যাতন” চলছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পরিপন্থী।
সব মিলিয়ে, আমির খান মুত্তাকির দিল্লি সফর কূটনৈতিক দিক থেকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার সঙ্গে যুক্ত বিতর্কটিও ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তালিবান সরকার বিশ্বমঞ্চে নিজেদের ভাবমূর্তি পাল্টানোর চেষ্টা করলেও, নারী অধিকার সংক্রান্ত তাদের অবস্থান এখনও গভীর প্রশ্নের মুখে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে তালিবান বিদেশমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে নিষিদ্ধ মহিলা সাংবাদিকরা, কী বলল বিদেশ মন্ত্রক?