দেবারুণ রায়
যদি মনে হয়, ফুলের দিন হল যে অবসান, তাহলে সেই গান কি প্রাণে অন্য কোনও তান জাগিয়ে যায় ? যায় না? আসুন স্মৃতির উজানপানে পানসি ভাসাই। এমনি বরষা ছিল সেদিন। সেদিনও ছিল ৮ আগস্ট। সাতচল্লিশ বছর আগে। এই দিনেই চিরবিদায় নিয়েছিলেন ফুলের দিন গানখানি বাঙালির কানে রেখে যাওয়া ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। তার মাত্র মাস দেড়েক আগে জ্যোতি বসুর সরকারে সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে হাতেখড়ি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। সেও কি ছিল না বাইশে শ্রাবণছোঁয়া দিন ? সিঙ্গুর থেকে সিঙ্গাপুরে শিল্প-রোখার শিল্প দেখতে দেখতে, হরেকরকম হারাকিরি আর হননের ছবি বুঝতে বুঝতে যিনি রবীন্দ্রনাথ স্মরণে রেখে মননে মন্থন করে যান, তিনি ছাড়া আর কে ডেকে নেয় তারে। ভুলের বাহার নেইকো যাহার, ফসল যাহার ফললো না, অশ্রু যাহার ফেলতে হাসি পায়। তাই বুঝি বাইশে শ্রাবণের নিশিভোর বুদ্ধবাবুর কাছে শরণের দিন। চলে যাওয়া বলে কিছু নেই। মনে ও যাপনে যিনি একজন, তাঁর এই মৃত্যুদিন তোমার দুয়ার খোলার ধ্বনি। শরণের আয়োজনের মুহূর্ত।
বুদ্ধবাবুকে এক মুহূর্ত “বুদ্ধ দা” বলে আর ভাবতে পারছি না কেন ? ওই তো ওঁর সাদা ফ্যাকাশে সেলাই করা চোখের যেন অন্য মুখ ‘ শান্তির পৃথিবী ‘( পিস ওয়ার্ল্ড ) ছেড়ে শববাহী হিয়ার্স ভ্যানে ঢুকে যাচ্ছে। কপালে বিনবিন ঘাম। বরফ হয়ে যাওয়া শরীরের গলনাঙ্ক। উষ্ণতার, জীবনের আর কোনও গল্প নেই। জীবনে বুদ্ধ দার উষ্ণতার রুদ্ধদ্বার দেখিনি। ঘেমো গন্ধ না বেরলে নাকি সাচ্চা কমিউনিস্ট হওয়ার যোগ্যতা হয় না। লি শাও চির লেখা কমিউনিস্ট ধর্মগ্রন্থে একথা লেখা না থাকলেও, রেজ্জাক মোল্লাকথিত সুসমাচার তাই বলে। মোল্লার দৌড় কী পর্যন্ত ? আপাতত তৃণমূল-গ্যারেজ পর্যন্তই। প্রাক্তন কমরেড ‘চাষার ছেলের’ পদলালিত্য ঝঙ্কার আর নেই। তিনি না তাঁর স্বঘোষিত প্রতিদ্বন্দ্বী বুদ্ধদেব কে শেষ বিচারে কমিউনিস্ট থেকে গেলেন সেই বিচার করে কে ? তোমার শেষ বিচারের আশায় আমি বসে আছি। নি:শ্বাসে বিশ্বাসে শেষে বেঁচে আছে কে ?
কেউ কি কখনও শুনেছে, কার জন্যে এই সত্যনিষ্ঠ সত্যব্রত জীবনের আনন্দ পরিপূর্ণ হয়ে রয়ে গেল ? এরপর আর কোনও যাত্রাপথ আছে ?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো রাজনীতির মানুষের জন্য শেষ প্রশ্ন কতোদিন ধরে বহন করে এসেছি । তার হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখি, জীবনের মতো সব প্রশ্নেরও শেষ আছে। রবীন্দ্রনাথকে রাজনীতির মুখের ভাষা করে দিয়ে যখন খুব ঘুম পেল বুদ্ধবাবুর, ঘুম ঘোরে তাঁর এলে মনোহর। সবাই দেখল জানল ঠাহর করল, আচ্ছা, যাদবপুর তো এই লোকটাকেই জনজীবন থেকে সপাটে বিদায় করেছিল পরিবর্তনের ভোটে। মনীশ গুপ্তকে মাথায় তুলে নিয়ে। মনীশের নেত্রীর পরিবর্তন রথে কাঠবিড়ালি ছিলেন সমীর পুততুণ্ড। আপ্রাণ করেছিলেন দল উদ্ধারে। যাদবপুরে নির্দল টিকি ছিল তাঁর। লালভোট কাটিবার পুত অঙ্গীকার। লালদীঘির পাড়ের পুত বিপ্লবের তীর্থপথে সে গাহিল গান। নীরব স্বাভিমান ছাড়া বুদ্ধের তীর্থভূমিতে আর কিছুই পড়ে নেই। মনীশ,সমীরসহ আরও কিছু চেনামুখ কি ভিরল ? না হারিয়ে গেল ভিড়ে ? যারা মীরার বৃত্তে ঘুরপাক দিয়ে গেছেন, বৌদিকে কত শান্ত কথার সান্ত্বনা রেখে গেছেন, তাঁদের ঝুলিতে আলোকচিত্র সকাল হতেই সৌজন্যের রাষ্ট্রনীতির দৃশ্য-শ্রবণ ঢক্কানিনাদ মৃত্যুদিনেও রিটার্ন গিফটে রেখে গেছেন বুদ্ধবাবু। কাগজগুলো নিঙড়ে দেখ অশ্রু পাবে। নন্দীগ্রামে, অনশনের আন্দোলনে খবর কাগজ নিঙড়োলে তো রক্ত পেতে ! ইতিহাসই এমনতর রসের রশি। রশ্মিও তো সেই ইতিহাস আলোকচিত্র আলো ফেলে অন্ধকারে। তখন শোনো চেনা গলায় বুদ্ধবাবু বলে যাচ্ছেন একনাগাড়ে। আকাশে নয়, আকাশবাণীর প্রতিধ্বনি শুনতে শুনতে হাঁটছে মিছিল, ফেস্টুন নিয়ে হাজির যারা শুভ্র কপোত, লাল টুকটুকে দিনের ফাইলে বুদ্ধবাবুকে দেখতে দেখতে রতন টাটার সিঙ্গুর পতন, ন্যানোর সানন্দ এবং নারায়ণমূর্তির তাড়ণ ও তোরণ সবকিছুকেই বুঝতে বুঝতে লিখেছিল, ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে …!
সেদিন গরিব মানুষের প্রতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মমত্বের পরিচয় পেয়েছিলাম
পুরনো দিন পুরনো সব গানের কলি। হাজার কথা শুনতে শুনতে ব্যাজার হবেন কেষ্টবিষ্টু। পুরনো কথা চালের মতো ভাতে বাড়ে। মানবজমিন কার কতটা অনুর্বর তা পরখ করার জন্যে এমন অন্তর্মুখী আয়না হওয়ার যোগ্য মানুষ আর প্রশাসক, একের ভেতর দুই দুনিয়ার জীবনমরণ স্নায়ুযুদ্ধ নিজের সঙ্গে নিজের দেখা নানান মোড়ে, এমন কোনও নেতা কিংবা মুখ্যমন্ত্রী ভারত এবং বাংলায় তো অদ্বিতীয় এবং একক বুদ্ধবাবু।
যদি কঠিন কঠোর গদ্যের কড়া হাতুড়ি হানি তবু কেন তাঁর অপ্রগল্ভ মধুর মূরতি ভাঙে না। রক্তপিপাসু মুখের গড়নে দেওয়াল চিত্রে অথবা ম-দোষের ভুয়ো ধুয়ো তুলে আর খবর কাগজে নন্দন নিয়ে নিন্দেমন্দ, খেউড় লিখে নিজেরাই সব লুকিয়েছে লুক। আয়না বাঁচিয়ে হাজার যোজন পালিয়ে গেলেও নিজের কাছেই ধরা পড়েছেন নেতা ও কেতার বুদ্ধিজীবী বা শিবির বদলে কদলি খাওয়ার অমাত্য যত। বুদ্ধজীবীও নাম হয়েছিল সেই সময়ের সুবিধাবাদী ও বিদুষকদের। বামদিন থেকে রামধনুদিন রামবাম বলে বাণ মেরে আর বম বম বলে দিন বদলায়, রাত কাড়াকাড়ি করে কার সাথে যুদ্ধ করবে বলে। বুদ্ধ তখন সরে যাচ্ছেন, ক্রমশ যে তাঁর নিজ নির্মাণে নির্বাণপথে আত্মনির্বাসনে।
শুধু কি আত্মনির্বাসন। অন্তরের তাপ শীতল করেছেন ক্রমাগত। নিজেকে সম্পূর্ণ-জীবন থেকে সরিয়ে নিয়েছেন ক্রমশ নির্বাপনের পণে। তখন মনে পড়ছে শুধু :
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো।
সকল দ্বন্দ্ববিরোধ-মাঝে জাগ্রত যে ভালো
সেই তো তোমার ভালো ॥
পথের ধুলায় বক্ষ পেতে রয়েছে যেই গেহ
সেই তো তোমার গেহ।
সমরঘাতে অমর করে রুদ্রনিঠুর স্নেহ
সেই তো তোমার স্নেহ ॥
সব ফুরালে বাকি রহে অদৃশ্য যেই দান
সেই তো তোমার দান।
মৃত্যু আপন পাত্রে ভরি বহিছে যেই প্রাণ
সেই তো তোমার প্রাণ।
প্রথম দুটো পঙক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রী-মুখে শোনা গেল রাজভবনের পাদপ্রদীপের নীচে এক সম্মুখসমরে। তিনি আর তাঁর বোধিমিত্র রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। গান্ধীর আরেক পাশে মমতা ব্যানার্জি। সিঙ্গুরের রণাঙ্গন থেকে তিনি এসেছেন রাজ্যপালের ডাকে। আর বারবার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব এসেছেন রাইটার্স থেকে। ওঁর রাজ্য পার্টির নেতারা রেগে যাচ্ছেন, মানা করছেন, তাঁদের কমরেড মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান সঙ্কট মনে করছেন আর বলছেন, তুমি/আপনি মুখ্যমন্ত্রী। চেয়ারের একটা সম্মান থাকবে না ? কেন যাচ্ছ / যাচ্ছেন বারবার ? তবুও বুদ্ধদেব অবিচল। কীসের ইগো ? রাজ্যে শিল্প গড়ে ছেলেমেয়েদের চাকরি দেওয়াটাই তাঁর আসল কাজ।এতে তাঁর মান যাবে না। তাই বিরোধী নেত্রী যা বলেছেন সেই অনুযায়ী সরকার যে রফাসূত্র করেছে, মধ্যস্থ গোপালকৃষ্ণর তা মনে ধরেছে। এবার মমতা মেনে নিলেই মিটবে সিঙ্গুরব্যথা, কারখানা হবে। নতুন করে ভোটার সাজাবে জয়ের নতুন বর্ণমালা। বিধি বাম ছিল না।ছিল না কখনও মৌলিক বিষয়ে বিকট প্রকটিত বিরোধীরা। মমতাকে তাই বুদ্ধ দিলেন মূল ধরতাই :
অন্ধকারের উৎস-হতে উৎসারিত আলো
সেই তো তোমার আলো!
উদার মনের আহ্বান শুনে নেত্রীও সেই রবীন্দ্রনাথে জবাব দিলেন:
সকল দ্বন্দ্ববিরোধ-মাঝে জাগ্রত যে ভালো
সেই তো তোমার ভালো ॥
তার পরেই তো বিবর্ণ হল রাজভবনের পাদপ্রদীপের গাছপালারা। সারিতে ছিলেন আজ কারাগারে পার্থ চ্যাটার। মমতার পাশে ছিলেন ভগ্নদূতের রোলে যে পুততুণ্ড। মমতাকে সাক্ষর করা থেকে টানলেন। বললেন, দেখ, কোথায় তুমি সাইন করছ। করলেই বাঁধা পড়ে যাবে এই চক্রে। কীসের আবেগ সূত্র ? আক্রমণের শর্ত চাই। জমি ফেরত এখনই এবং এখনই চাই। এর মধ্যে কোনো বাট কিন্তু থাকবে না। অতএব রফাসূত্র পরাভূত। অনদিকে দলে, সরকারে অন্তর্বিরোধ চরমে। সুভাষ নন্দ ক্ষীতিরা ঘরের মধ্যে ঘর বেঁধেছেন। ফ্রন্টের ভেতরে ফ্রন্ট। ভেতরের বাধা পিছনপানে টানে। বাইরে পথের অবরোধ চলার পথে প্রাচীর তুলে দেয়। প্রতিরোধ করে প্রগতি। তবু কেন কমরেড সুভাষ এসে বলেন, সিঙ্গুরের ওই পথ অবরোধ পুলিশ দিয়ে তুলে দাও। দল তাই চাইছে। আমি চাইছি। আমরা সবাই চাইছি। রাজি হলেন না বুদ্ধ।দলের রাজ্য নেতৃত্বে নেই সুভাষ চক্রবর্তী। তাছাড়া তিনি শরিক মন্ত্রীদের নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকান। জ্যোতি বাবুকে ও ভুল বোঝান। সুতরাং এটা সরলমনে বলা কথা, না অন্য কোনও ফাঁদ ?সুভাষকে তিনি বললেন,” না । পুলিশ দিয়ে অবরোধ সরাব না। অগণতান্ত্রিক কাজ করে ওদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারব না।” গৌতম দেবও একই প্রস্তাব নিয়ে এলেন। বুদ্ধ দা, মানুষ চাইছে এই নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা বন্ধ হোক। আমাদের নিস্ক্রিয় মনে করছে আম জনতা। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আপনি মানুষের ম্যান্ডেট পেয়েছেন শিল্পায়নের পক্ষে। বোল্ড স্টেপ নিতে হবে আমাদের। গৌতমকে ভালোবাসা আর ভরসার মানুষ বলে বিশ্বাস করেন বুদ্ধ। পার্টির ইনার স্ট্রাগলে গৌতম সদাই সঙ্গী। দল কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে থাকুক এই প্রশ্নে ভোটাভুটির সকালে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি ও গৌতম এক মেরুতে। জ্যোতি বসু, সুরজিৎ, ইএম এস এর সঙ্গে ছিলেন তিনি, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, হান্নান মোল্লারা। আর প্রকাশ কারাটের পাল্টা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন বিমান বসু, অনিল বিশ্বাস, সীতারাম ইয়েচুরিরা। নীচের স্তরে রাজনৈতিক লাইনে সুভাষ চক্রবর্তীও ছিলেন বুদ্ধর সঙ্গে একমত। গৌতম দেব চাইতেন, রাজনৈতিক লাইনে এক মেরুতে অবস্থান করছেন যারা তাদের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে যেন না পারে কেউ। তাই এই ইস্যুতেও তিনি বুদ্ধ ও সুভাষকে এক করতে চান। তাই হল না শেষ পর্যন্ত। সিঙ্গুরের রণাঙ্গন আর নন্দীগ্রামের ফন্দি ফিকির এক হল না বলে। নন্দীগ্রামে দলের সর্ষের ভেতরের ভূত নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের অন্যান্য সবাই একমত হলেও সুভাষ চক্রবর্তী হলেন না। হলেন না তাঁর ঘোঁট শরিকরাও। দলের ভেতরে লক্ষ্মণ শেঠের ত্রাতার ভূমিকা পালন করে গেলেন সুভাষ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে বিরোধে জড়ালেন।
অথচ সইফুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সীতারাম ইয়েচুরি আর অনিল বিশ্বাসের আনা অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন নি যাঁরা তাঁদের প্রথম নামটি ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সফিকে দলে রাখতে মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন বুদ্ধদেব। সফিকে ডেকে এনে হাত ধরে অগ্রজ কমরেডের ভালোবাসামাখা আর্জি ছিল, “আমাকে ফেলে তুমি কোথায় যাচ্ছ সফি ? আমিও তো তোমার সঙ্গে যেতে পারি।” সফি বলেছিলেন, না আপনার অনেক বড় দায়িত্ব পালন করছেন আপনি। আমাকে যেতে দিন। সফিকের নিয়ে বিচিত্র মেরুকরণের ছবি। সীতারাম ইয়েচুরি, সুরজিৎ, কারাটের সঙ্গে তথাকথিত পাওয়ারফুল বর্ধমান লবি, রাজ্য পার্টির অনিল বিশ্বাস ও বিমান বসু। অন্যদিকে সফিকে দলে রাখতে চান জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তী স্তরে দলের যে তরুণ ব্রিগেড তখন মাথা তুলছে তাদের মধ্যে সফির জন্য প্রকাশ্যে সরব হতে অপারগ হলেও নীরব অশ্রুপাতে দিন কাটাচ্ছেন তখন সেলিম ছাড়া উল্লেখযোগ্য সবাই। যেমন গৌতম দেব, শমীক লাহিড়ি, নীলোৎপল বসু, ডা. রামচন্দ্র ডোম, সুখেন্দু পাণিগ্রাহী। সইফুদ্দিন বধ কাব্য রচনার মূল কবি দু’জন। অনিল বিশ্বাস ও সীতারাম ইয়েচুরি। দোহারে ছিলেন কারাট ও বিমান। গাজর দেখিয়ে নেতারা দলে টানলেন সবাইকেই একে একে। ভয়ে ভক্ত হয়ে আপন প্রাণ বাঁচাতে চাইলেন হান্নান মোল্লা, মহ. সেলিম। সফিকে যে যুক্তিতে কাটোয়ায় কাটা হল, সেই সূত্র যে নিতান্তই অসার তার প্রমাণ দিলেন উলুবেড়িয়ার হান্নান মোল্লা, বাঁকুড়ার বাসুদেব আচারিয়া ও বোলপুরের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ অনেকেই। তাছাড়া, সেলিম, হান্নান, মাহবুব জাহেদি আর আবু আয়েসকে পায়েস খাইয়ে, মানে পদে রেখে বিপদে উদ্ধার পেতে চাইল সিপিএম। মুসলমানদের বার্তা দিল। কালক্রমে এই নেতারা অবশ্য বেগ পেতে পেতে সার বুঝতে পেরেছেন। আবু আয়েস তো আধ খাওয়া পায়েস নেতাদের খাইয়ে চলে গেছেন তৃণমূলে। আগাগোড়া এই সফিপর্বে দলে তিক্ততা বেড়েছে। দাদা, ভাইয়ের মতো কমরেডদের সঙ্গে মানিয়ে চলেছেন মানসিক দূরত্ব রেখে। চাপ ছিল ভেতরে ভেতরে। তিনি সফিকে ফেরানোর হরেক চেষ্টা করে শেষে বেদনাবিধুর হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। এবং এই ভাবেই পদ, দল, দায়িত্ব একে একে ছাড়তে ছাড়তে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কমারেডারির বাহুডোর থেকে মুক্ত হতে হতে বুদ্ধের নির্বাণ। আবেগ তাঁকে বেগ দিয়েছিল। তাই তাঁর ডু ইট নাও, পারফর্ম অর পেরিশ আর বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্টের ডাক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কুড়িয়েই শেষ হয়ে যায় না। সময়ের আগুনে পোড়ে না। অক্লেদ্য অদাহ্য অর্থাৎ ‘ন হন্যতে’ হয়ে যায়। জীবনকে যে বলে, তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে যেন জাগি, মৃত্যুতে সেই শেষ না হয়ে অশেষ হতে পারে। সিঙ্গুরের রণাঙ্গন থেকে আর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে রাজভবনে এসেছিলেন সেদিন যথাক্রমে মমতা ব্যানার্জি ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেদিনের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃতির জবাবে আজকের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন পরের দুটো পঙক্তি। আজ সেই স্মৃতি কেন জাগে মনে যা জানা যাবে। সেই সঙ্গে বুদ্ধদেববাবুকেও বলা যাবে আরও পরের পঙক্তিগুলো। /সব ফুরালে বাকি রহে অদৃশ্য যেই দান/সেই তো তোমার দান।/মৃত্যু আপন পাত্রে ভরি বহিছে যেই প্রাণ/সেই তো তোমার প্রাণ।
এই কথাগুলো লাইনগুলো গোপালকৃষ্ণ গান্ধী তো জানেনই। বিলক্ষণ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।